Arvind Kejriwal court hearing : দুর্নীতির তকমা দিয়ে বিরোধীদের দমন, কেজরিওয়াল                                                                    মামলায় নতুন খোলসা

ক্ষমতা ধরে রাখার জন্যে বিজেপির অপ প্রয়াস এর মুখোশ খসে পড়ছে। বিরোধীদের দমন করতে একের পর এক দুর্নীতির ফাঁদ পাতা হচ্ছে বিরোধীদের জন্যে।

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রাফতারের ঘটনায় গোটা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে গেছে। তার পাশাপাশি নির্বাচনী বন্ড ইস্যুর খোলসা হতেই লেজে গোবরে হয়ে গেছে দেশের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। জাতীয় স্তরের বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বিজেপির ডবল ইঞ্জিন এর পেছনে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতির চিত্র টেনে বেড় করে আনছেন। আর এরই মধ্যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কে কিসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে রীতিমতো বিজেপি সরকার এবং ইডি কে মাননীয় আদালতের ভেতরেই তুলোধোনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
বর্তমানে দিকে দিকে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জয়ের লক্ষ্য সুনিশ্চিত করতে প্রচার প্রসার চালাচ্ছে। কিন্তু বিরোধীদের সাথে বিজেপি সরকার এর ইডি দ্বারা যে স্বৈরাচারী আক্রমণ করা হচ্ছে তা নিয়ে যথেষ্ট সরব দেশের আম জনতা। আম আদমি পার্টির পক্ষ থেকেও একাধিক সাংবাদিক বৈঠক করে কিভাবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল কে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তা নিয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু আজ ইডির কোর্টে সুনানির সময় উঠে এলো আরও কিছু বিস্তারিত তথ্য। যা শোনার পর এক প্রকার জবাব বিহীন হয়ে পড়েছে বিজেপি সরকার এবং খোদ ইডি ও।
ইডির কোর্টে বৃহস্পতিবার কেজরিওয়ালের পক্ষের উকিল জামিন এর আর্জি জানালেও জামিন মঞ্জুর হয়নি। প্রশ্নুত্তর পর্বে আজ অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও নিজের বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশেষ বিচারপতি কাবেরি বাবেজার সামনে বলেন ইডির রিমান্ড এর বিরোধিতা তিনি করছেন না। বরং উনাকে কিসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই প্রশ্নই তুলে ধরলেন কেজরিওয়াল।
মূলত ১ জনের বয়ানের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল অরবিন্দ কেজরিওয়াল কে। এছাড়াও আরও তিনজন সাক্ষী ছিলেন, যাদের বিষয়ে আজ কোর্টে খোলসা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানত যার সাক্ষির ভিত্তিতে উনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তার নাম সি অরবিন্দ , যিনি অরবিন্দ ফার্মা নামক একটি ঔষধ এর কোম্পানির মালিক। দুর্নীতির খাতায় নাম আসার পর ইডি সি অরবিন্দ কে জেরা করলে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নাম উল্লেখ করেন তিনি। আর সেই সাক্ষীর উপর ভিত্তি করেই রাতারাতি গ্রেফতার হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
এছাড়া ও যে তিনজনের সাক্ষী নেওয়া হয়েছিল তাদের বিষয়ে ও বিস্তারিত জানিয়েছেন এদিন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তাদের মধ্যে একজন মাগুন্টা শ্রীনিভাসালু রেডডি। যিনি জগন রেড্ডির পার্টির একজন সাংসদ ছিলেন। ২০২১ সালের ১৬ই মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্যে উনার দফতরে আসেন । ফ্যামিলি চ্যারিটি করবেন বলে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন এলজি সাহেবের কাছে চিঠি প্রেরন করার জন্যে। এইটুকুই আলোচনা হয়। এর পরেই ২০২২ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর উনার বাড়িতে রেইড হয়। তখন ইডির এক প্রশ্নের জবাবে তিনি কেজরিওয়ালের সাথে উনার সাক্ষাতের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু ইডি তার জবাবে সন্তুষ্ট ছিল না। ৫ মাস পর উনার ছেলে কে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। অসহায় হয়ে ১৬ই জুলাই ২০২৩ কেজরিওালের বিরুদ্ধে বয়ান দেন সাংসদ মাগুন্টা শ্রীনিভাসালু রেডডি। ১৮ই জুলাই মুক্ত করে দেওয়া হয় উনার ছেলে কে। ইডির উদ্দেশ্য ছিল অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে সাক্ষী একত্রিত করা। সাংসদের মতোই পর পর আরও ২ জন কে বাকা পথে হেনস্থা করে , জেলে পুড়ে, কিংবা ভয় ভীতি প্রদর্শন করে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবার জন্যে বাধ্য করে ইডি। এছাড়া ও বহু রাজ্যে বিরোধী দলের নেতৃত্বদের দুর্নীতির মামলায় ফাঁসিয়ে তাদের বিজেপি তে যোগদান করতে বাধ্য করেছে বিজেপি। এমনকি প্রকৃত দোষীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার নির্বাচনী বন্ড নিয়ে তাদের কে নিরপরাধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে বিজেপি।
অরবিন্দ কেজরিওয়াল বরাবরই বিজেপির দুর্নীতির বিরোধিতা করেছিলেন বলে লোকসভা নির্বাচনের একেবারে প্রাক মুহূর্তে উনাকে দমিয়ে দিয়ে দিল্লী কে পুরোপুরি ভাবে নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে আসাটাই বিজেপির মূল লক্ষ্য।
পরবর্তী সুনানির দিন ১লা এপ্রিল। কোর্টের বিচারপতি সমস্ত সাক্ষ প্রমানের ভিত্তিতে কি ঘোষণা দেন সেদিকেই তাকিয়ে গোটা দেশের মানুষ। দুর্নীতি কাণ্ডে প্রকৃত দোষী দের মুখোশ খসে পড়তে আরও কতটা সময় লাগবে সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে কোটি কোটি ভারত বাসী।

Leave A Reply