AMC Brutality in Melarmath : “উন্নয়নের” মোড়ে আবারও বিপাকে রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষ। এবার আগরতলার প্রাণকেন্দ্র মেলার মাঠে চালানো হলো উচ্ছেদ অভিযান। রাস্তার দু’ধারে দীর্ঘদিন ধরে জীবিকা নির্বাহকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আজ কার্যত পথে বসেছেন।
সম্প্রতি আগরতলা পুর নিগমের তরফে মেলার মাঠ ও লেইক চৌমুহনী বাজার এলাকায় হঠাৎ করেই চলে এই চূড়ান্ত অভিযান। দোকানগুলিকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে কোনোরকম পুনর্বাসনের ব্যবস্থা ছাড়াই একের পর এক স্টল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি হয়েছে অমানবিক ও মনুষ্যত্বহীন ভাবে।
প্রশ্ন উঠছে, উন্নয়নের নামে এই উচ্ছেদ আদৌ কার স্বার্থে? সাধারণ মানুষের কথা না ভেবেই এভাবে রুটি-রুজির ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া কি সত্যিই ন্যায্য?
শাসক দল বিজেপির আমলে আগরতলা পুর নিগমের এমন “উন্নয়ন” মূলক পদক্ষেপে জনমানসে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে, ভোটের সময় যাঁদের “চাকরি, উন্নয়ন” এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা হয়েছিল, তাঁদের শাসনেই আজ কেন ছিন্নমূল হচ্ছেন হাজার হাজার পরিবার?
একের পর এক অভিযোগ উঠে আসছে—
কোনো নোটিশ ছাড়াই হঠাৎ উচ্ছেদ
পুনর্বাসনের ন্যূনতম ব্যবস্থাও নেই
প্রশাসনের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি
শুধু মেলার মাঠ নয়, রাজধানীর একাধিক প্রান্তে একই ছবি। প্রশাসনের এই আচরণে গোটা শহরে অসন্তোষের ঢেউ ছড়িয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে,
“উন্নয়ন তখনই অর্থবহ হয়, যখন তা অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। ক্ষমতার কাছে সাধারণ মানুষের জীবিকা আজ যেন উপহাসে পরিণত হয়েছে।”
বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জীবিকার নতুন পথ খুঁজতে হন্যে হয়ে ছুটছে। কেউ কেউ ছোট ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করছেন, কেউ বা অন্যত্র মাথা গোঁজার আশ্রয় খুঁজছেন। অথচ শাসক পক্ষ এখনো কোনো নির্দিষ্ট পুনর্বাসন পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি।
আগামী দিনে এই ঘটনা যদি রাজনৈতিক ইস্যুতে রূপ নেয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার বারবার দাবি করে আসছে— রাজ্যে বেকারত্ব কমেছে। কিন্তু শহরের রাস্তায় রোজগারের আশায় বসে থাকা হাজারো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, উচ্ছেদে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলো যেন সেই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে চলেছে।
এই মুহূর্তে প্রশ্ন হচ্ছে—
যেখানে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাতে বসে রুটিরুজির ব্যবস্থা করে আসছিলেন, সেখান থেকে তাঁদের সরিয়ে দিয়ে সরকার কাকে কর্মসংস্থানের পথ দেখাচ্ছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন—
“চাকরির সুযোগ না দিয়ে যারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে, তাঁদেরই যদি পথে বসানো হয়, তাহলে সরকারি পরিসংখ্যান আদৌ কাকে উপস্থাপন করছে?
যদি বেকারত্ব কমেই থাকে, তাহলে কেন এত মানুষ ফুটপাতে দোকান বসাতে বাধ্য।
রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, আগরতলায় এই ধরনের উচ্ছেদ অভিযান শুধু উন্নয়নের মুখোশ, যার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে হাজারো বেকার যুবকের লড়াই।