Akash Kar in 5 days police remand
প্রসঙ্গ ভিকি হত্যা মামলা। আকাশ পাঁচ দিনের জন্য পুলিশের হেফাজতে।বড় মাথার পরামর্শে পুলিশের তৈরি করা চিত্রনাট্য অনেকটাই সফল। এই মামলায় মূল অভিযুক্তরা এখনো কলকাতাতে দিব্যি মৌজ মস্তিতে কাটাচ্ছে বলে খবর।
দুর্গা প্রসন্ন হত্যা মামলায় প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পুলিশ নিজেদের তৈরি করা চিত্রনাট্যের সফল প্রয়োগ এবং একাংশ পুলিশ কর্মীদের সুন্দর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখার প্রক্রিয়ায় অনেকটাই সফল। অর্থাৎ এই হত্যাকাণ্ডে মূল কুশীলবদের, অপরাধ আড়ালে রেখে একাংশ মিডিয়াকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রচারে পুলিশ সাধারণ মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, দুর্গা প্রসাদকে পয়েন্ট রেঞ্জ থেকে গুলি করেছে আকাশ অর্থাৎ সন্দীপ কর। রাজু বর্মন, বিমান দাস, রাকেশ বর্মনরা এই খুনের মূল অভিযুক্ত নয়, তারা গুলি চালায় নি। আকাশ কর ওরফে সন্দীপ কর তিন তিনটি গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ভিকিকে। পুলিশের এই ধরনের লোমহর্ষক প্লট সাজানোর পেছনে বড় মাপের রাজনৈতিক ক্ষমতাধরের বড় মাথা কাজ করছে বলে অভিযোগ। তবে পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী এই খুনকাণ্ড রাজনীতির সাথে জড়িত নয় সেটা অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য। সিপিডাব্লিউডির নিগোসিয়েশন এবং ভারতরত্ন সংঘের পোর্ট ফোলিও নিয়ে ঠান্ডা ক্ষমতার লড়াইয়ে দুর্গা প্রসন্ন খুন হয়েছেন সে যুক্তি অস্বীকার করছে না পুলিশ। কিন্তু পেছনে প্রকৃত রহস্য কি, এর পেছনে রাজনৈতিক ক্ষমতাধর কোন ব্যক্তির অঙ্গুলি হেলন রয়েছে কিনা সেই বিষয়টি পুলিশ সামনে আনবে না যেন মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিয়েছে। যার কারণে, দুর্গা প্রসন্ন হত্যা মামলায় যারা মাস্টারমাইন্ড তারা রয়েছে এখনো মহা আনন্দে। পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার গোপন ঢেড়ায় তারা যথেষ্ট মৌজ মস্তিতে রয়েছে, এবং তাদের উপদেষ্টা রাজ্যের একসময়ের কুখ্যাত মাফিয়া অমিত ঘোষ তাদেরকে পরামর্শ( কুপরামর্শ)দিয়ে, অচিরেই তারা বিপদমুক্ত হয়ে যাবে সেরকমটাই ভরসা দিচ্ছে বলে খবর। আর এই প্রচেষ্টা যে অমূলক নয়, কলকাতার গোপন ঢেরা থেকে দুর্গা প্রসন্ন খুনের মামলায় অভিযুক্তরা রাজ্যের আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে, আগাম জামিন দেওয়ার প্রচেষ্টা নিচ্ছে বলে যে খবর চাওয়ার হয়েছে তার সত্যতাই এর প্রমাণ। এদিকে পুলিশ দুর্গা প্রসন্ন খুন মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার ঝাড়খন্ড থেকে গ্রেফতার করেছে আকাশ কর নামে এক যুবককে। তার বাড়ি ঊষা বাজার এলাকাতেই।রাজ্য পুলিশ তাকে ঝাড়খন্ডের পাখুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে।পুলিশের সন্দেহ আকাশ করই ভিকিকে খুব সামনে থেকে পিস্তল থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। এখন পর্যন্ত এমনটাই পুলিশের দাবি। গণমাধ্যমের সামনে পুলিশ তাদের এই সন্দেহটাই প্রচার করে মানুষজনকে খাইয়ে দিয়েছে।পুলিশ সূত্রেই পুলিশের এই গোপন অভিপ্রায় জানা গেছে। এদিকে শুক্রবার ধৃত আকাশকে ট্রানজিস্ট রিমান্ডে আনার হয় রাজ্যে এবং তোলা হয় আদালতে। তার ট্রানজিস্ট রিমান্ড মঞ্জুর হবার পর শনিবার, সকালে তাকে বিমান যোগে নিয়ে আসা হয় আগরতলায়। বিমানবন্দর থেকে মেডিকেল করানোর জন্য তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় আগরতলা জিবি হাসপাতালে। পরে তাকে কোর্টে পেশ করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতের কাছে পুলিশ দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। সবদিক বিচার বিবেচনা করে, বিচারক আকাশকে পাঁচদিনের পুলিশ রিমান্ডে প্রেরণ করেছেন। তাকে আগামী ১৬ মে কেস ডায়রি সহ ফের আদালতে সোপর্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। অন্যদিকে এই মামলায়, তদন্তকারী পুলিশের দাবি, দূর্গা প্রসন্ন হত্যাকান্ডের পর অভিযুক্তদের তালিকায় উঠে এসেছিলো আকাশ করের নাম। পুলিশের উদ্ধার করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও ঘটনার সময় আকাশ করের অস্পষ্ট অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আকাশ করের মুখ ছিলো কিছুটা অস্পষ্ট। পুলিশের এই বিষয়টাও অত্যন্ত নাটকীয়। আকাশ কর গুলি চালিয়েছে এবং তার মুখ অস্পষ্ট এই ধরনের পুলিশি মতবাদ সাধারণ মানুষের সামনে আনার মূল উদ্দেশ্য, দুর্গা প্রসন্ন হত্যা মামলা চলাকালীন সময়ে বেনিফিট অফ ডাউটে যাতে আকাশ কর পার পেয়ে যেতে পারে তার পূর্বপরিকল্পনা। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখেই পুলিশের সন্দেহ গভীর হয়। এরপরেই পুলিশ আকাশ করের বাড়িতে হানা দিয়েছিলো। কিন্তু তাকে পাওয়া যায় নি। তাকে বাড়িতে না পাওয়া
যাওয়ায়,অনুসন্ধানকারী পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায় ভিকি হত্যাকান্ডের সঙ্গে আকাশ কর জড়িত । এর পর থেকেই পুলিশ আকাশ করের খোঁজে নামে। পুলিশ নিশ্চিত হয়ে যায় আকাশ ঘটনার পর রাজ্য ছেড়ে বহিঃ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। এরপরই
আকাশকে জালে তোলার জন্য পুলিশ তার মোবাইল ট্র্যাক করে। আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে পুলিশ আকাশ করের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। তখন আকাশ ছিলো ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার পাখুর রেল স্টেশন এলাকায়। সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য পুলিশ বিষয়টি পাখুর রেল স্টেশনের পুলিশকে অবহিত করে। রেল পুলিশ সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করে আকাশ করকে। এবং তাকে স্থানীয় থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই রাজ্য পুলিশের একটি দল রওয়ানা দেয় ঝাড়খণ্ডের উদ্দেশ্যে।শুক্রবার সাহেবগঞ্জের জেলা আদালতে ধৃত আকাশ করকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এই আদালতে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রানজিস্ট রিমান্ডের আবেদন জানানোর পর আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে শুক্রবারেই ধৃত আকাশ করকে নিয়ে তদন্তকারী পুলিশ রওনা হয় কলকাতার উদ্দেশ্যে এবং কলকাতা থেকে শনিবার আগরতলায় নিয়ে আসা হয়েছে আকাশকে। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, আকাশকে পুলিশ রিমান্ডে পাওয়া গেছে, এক্ষেত্রে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, দুর্গা প্রসন্ন খুনের মোডাস অপারেন্ডি পরিষ্কার হয়ে যাবে। পরবর্তী সময় এই খুন কাণ্ডে আর কারা কারা জড়িত রয়েছে তাদেরকেও এতে গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে জানালো তদন্তকারী পুলিশ।