Agartala Visa Office : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ত্রিপুরার আগরতলা সার্কিট হাউজ সংলগ্ন বাংলাদেশ ভিসা অফিস প্রাঙ্গনে মঙ্গলবার এক স্মরণসভা ও শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের স্মরণে প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর এই দিনটি উদযাপিত হয়। বাংলাদেশে দিনটির বিশেষ তাৎপর্য থাকলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতেও দিনটি শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের হাই কমিশনারসহ ভিসা অফিসের আধিকারিকরা, ত্রিপুরা প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রণব সরকার, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া উভয় দেশের সকল বীর সেনা ও শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রেস ক্লাবের সভাপতি প্রণব সরকার বলেন, বিজয় দিবস মূলত শ্রদ্ধা নিবেদনের দিন। প্রতিবছর এই দিনের তাৎপর্য নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন নেই। তবে তিনি ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে বর্তমান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ছাত্র গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় ও তাদের ধর্মীয় স্থাপনার উপর আঘাতের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এসব ঘটনা আমাদের মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বহু সাংবাদিক কারাবন্দি রয়েছেন, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রশ্ন তোলে। কোনো অপরাধ করলে আইনের মাধ্যমে বিচার হওয়া উচিত, তবে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে আটক থাকা স্বাধীনতার চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রণব সরকার বলেন, “স্বাধীনতা তখনই অর্থবহ হয়, যখন সকল মানুষ নিরাপদে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে, ধর্ম পালনের অধিকার পায় এবং বাঁচার অধিকার সুরক্ষিত থাকে।” তিনি বাংলাদেশে শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরাও একই সুরে বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক—এই কামনা করেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই স্বপ্ন ও মূল্যবোধ আগামীতেও অটুট থাকবে।সমগ্র অনুষ্ঠানটি শ্রদ্ধা, স্মরণ ও শান্তির বার্তা নিয়ে সম্পন্ন হয়।
আগরতলার বাংলাদেশ ভিসা অফিস প্রাঙ্গনে মহান বিজয় দিবস পালন শুধু একটি স্মরণানুষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ ও বর্তমান বাস্তবতার প্রতিফলনও তুলে ধরেছে। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উঠে আসে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বক্তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট, স্বাধীনতার স্বপ্ন তখনই পূর্ণতা পায় যখন একটি রাষ্ট্রে সকল নাগরিক নিরাপদে, সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারে। মহান বিজয় দিবসের এই উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে শান্তি, সহনশীলতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বানই ছিল অনুষ্ঠানের মূল বার্তা।



