Abhoynagar CPIM : ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের শাসনামলে উন্নয়নের অভাব, মূল্যবৃদ্ধি এবং জনপরিসেবার বেহাল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার এক তীব্র প্রতিবাদ জানায় বামফ্রন্ট।
সিপিআইএম-এর অভয়নগর অঞ্চল কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত হয় এক বিশাল গণ অবস্থান আগরতলার রাধানগর বাসস্ট্যান্ড চত্বরে।
এই অবস্থানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও সিপিআইএম পলিটব্যুরোর সদস্য জিতেন্দ্র চৌধুরীসহ অন্যান্য বাম নেতৃত্ব। জনজীবনের সমস্যার বহুমাত্রিক রূপ তুলে ধরতে অবস্থান মঞ্চে একাধিক দাবির সূচনা হয়— বিদ্যুৎ, পানীয় জল, সিএনজি ও পিএনজির মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার, গোমতী দুধের দাম হ্রাস এবং স্মার্ট মিটার প্রকল্প বাতিল ইত্যাদি।
এদিন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন রাজ্য সরকারকে। তিনি বলেন,
“বাম সরকার ২৫ বছরে যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলি চালু করেছিল, বিজেপি সরকার সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ তো করেইনি, বরং অধিকাংশ প্রকল্প মাঝপথেই থেমে গেছে। নতুন করে কিছু শুরু তো করেনি। অথচ দাবি করে চলেছে উন্নয়ন-উন্নয়ন!”
চৌধুরীর অভিযোগ, ‘স্মার্ট সিটি’র নামে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ সেই টাকার হিসেব নেই। জল জীবন মিশনেও চলছে অর্থ আত্মসাৎ। তিনি বলেন,
“আগরতলা আজও স্মার্ট হতে পারেনি, ত্রিপুরার সাধারণ মানুষ পায়নি সুপেয় জল, স্থায়ী বিদ্যুৎ, উন্নত রাস্তাঘাট। স্মার্ট হয়েছে কেবল শাসক দলের কিছু নেতা, যারা ছাপ্পা ভোটে কর্পোরেটর বা বিধায়ক হয়েছেন।”
জনপরিসেবা বেহাল, মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস
অবস্থানে অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ জানান, সাধারণ মানুষ আজ বিদ্যুৎ বিল, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, পানীয় জলের সংকট এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপর্যস্ত। স্মার্ট মিটার বসিয়ে বিদ্যুৎ খাতে নতুন করে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বেকার যুবকদের চাকরি দেবে, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন আনবে। বাস্তবে দেখা গেছে— চাকরির সুযোগ কমেছে, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল দশা, আর শিক্ষা খাতে বিনিয়োগও প্রায় নেই বললেই চলে।
ছাপ্পা ভোট ও কর্পোরেট রাজনীতি নিয়েও সরব সিপিআইএম
বক্তারা অভিযোগ করেন, রাজ্যে নির্বাচনের নামে চলছে গণতন্ত্রের প্রহসন। বহু ওয়ার্ডে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি বিরোধীদের। ছাপ্পা ভোটে ক্ষমতা দখল করে কিছু নেতাকে ‘স্মার্ট’ বানানো হয়েছে।
“ত্রিপুরায় আজ শাসক দলের লোকজন ছাড়া কেউ নিরাপদ নয়। প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ— সবকিছুই দলীয় নিয়ন্ত্রণে চলছে,” বলেন আন্দোলনরত এক কর্মী।
এই গণ অবস্থান থেকে সিপিআইএম ঘোষণা করে, মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই আরও জোরদার হবে। চৌধুরী জানান,
“এই আন্দোলন এখানেই শেষ নয়। গ্রামেগঞ্জে, শহরে, প্রতিটি ওয়ার্ডে এই সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা হবে। স্মার্ট শাসনের ভেলকি এবার ফাঁস হবে জনতার সামনে।”
এদিনের দাবি গুলো হলো –
বিদ্যুৎ ও স্মার্ট মিটার দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্ত
সিএনজি, পিএনজি ও দুধের মূল্য হ্রাস
জল জীবন মিশনে স্বচ্ছতা ও দ্রুত বাস্তবায়ন
স্মার্ট সিটি প্রকল্পের অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে তার হিসাবদানে বাধ্য করা
এই গণ অবস্থান প্রমাণ করে, রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে এবং আগামী দিনে বাম শিবির বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবে।