CPIM Dukli News : ৭ই নভেম্বর, মহান নভেম্বর বিপ্লব দিবস ও জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করল সিপিআইএম ডুকলি মহকুমা কমিটি। ১৯১৭ সালের রাশিয়ার মহান নভেম্বর বিপ্লব তথা সিপাহী-জনতা বিপ্লবের স্মরণে এই দিনটি প্রতিবছর পালন করা হয়। সমাজতন্ত্র, শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি এবং শ্রেণীহীন সমাজ গঠনের এই ঐতিহাসিক আদর্শকে সামনে রেখে শুক্রবার এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় ডুকলিতে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন বিধায়ক ও পার্টি নেতা রাজকুমার চৌধুরী। সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য ও রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী, পশ্চিম জেলা কমিটির সম্পাদক রতন দাস, ডুকলি মহকুমা কমিটির সম্পাদক সমর চক্রবর্তী এবং বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত চক্রবর্তী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য নবারুণ দেব, ঝর্ণা দাস বৈদ্য, স্বপ্না দত্ত, নারায়ণ দেব, পশ্চিম জেলা কমিটির সদস্য সৃজন দেব, পঙ্কজ ঘোষ, বিপদবন্ধু ঋষিদাসসহ অসংখ্য কর্মী-সমর্থক।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, “কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসে নভেম্বর বিপ্লব এক ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত। এই বিপ্লব দেখিয়েছি, শোষিত-নিপীড়িত মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম সমাজের কাঠামো বদলে দিতে পারে।” তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, “সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির ভেতরে এক সময় আত্মতুষ্টি ও শৃঙ্খলার অভাব দেখা দেয়। গর্বাচভের ‘পেরেস্ট্রইকা’ ও ‘গ্লাসনস্ত’ নীতির মাধ্যমে সমাজতন্ত্রকে দুর্বল করা হয়েছিল। এই নীতিগুলি শ্রেণীসংগ্রামের ধারাকে ক্ষীণ করেছিল, যার ফলেই সমাজতন্ত্রের ভিত্তি নড়ে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশেও কমিউনিস্ট আন্দোলন সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। ১৯৬৪ সালে সিপিআই থেকে সিপিএমের জন্মই ঘটেছিল আদর্শ ও শ্রেণীচরিত্রের প্রশ্নে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়ার মধ্য দিয়ে। আজকের দিনে সেই শিক্ষা আরও প্রাসঙ্গিক — কারণ সমাজে পুঁজিবাদী শক্তির আগ্রাসন দিন দিন বাড়ছে।”
সভায় অন্য বক্তারাও সমাজতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ, শ্রমিক-কৃষক ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাম আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা বলেন, নভেম্বর বিপ্লবের চেতনা আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ শোষণ ও বৈষম্য এখনো বিদ্যমান।
অনুষ্ঠান শেষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং বিপ্লবী স্লোগানে মুখরিত হয় সমগ্র প্রাঙ্গণ। উপস্থিত সকলেই সমাজতন্ত্র ও শ্রেণীহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
নভেম্বর বিপ্লব দিবসের এই অনুষ্ঠান শুধু অতীত স্মরণ নয়, বরং ভবিষ্যতের সংগ্রামের দিশা নির্ধারণের এক প্রতিজ্ঞার মঞ্চে পরিণত হয় ডুকলিতে।



