খবরে প্রতিবাদ

খবরে প্রতিবাদ

Thursday, 27 November 2025 - 01:29 AM
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ - ০১:২৯ পূর্বাহ্ণ

Ratan Lal Nath : লঙ্কামুড়ায় মন্ত্রী কাচি হাতে, কিন্তু কৃষকের দাবি এখনো অমীমাংসিত

Ratan Lal Nath
1 minute read

Ratan Lal Nath : লঙ্কামুড়ার কৃষি জমিতে দেখা গেল এক অচেনা দৃশ্য—কাচি হাতে ধান কাটছেন রাজ্যের কৃষি মন্ত্রী রতন লাল নাথ। কৃষকের পোশাকে, হাঁটু পর্যন্ত কাঁদা জলে নেমে মন্ত্রীর এই ছবি ছড়িয়ে পড়তেই প্রশংসার ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই প্রদর্শনমূলক উদ্যোগেই কি কৃষকের আসল সমস্যা মিটবে?

মন্ত্রী এদিন আগরতলা পুর নিগমের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত লঙ্কামুড়া গ্রামে কৃষক বিষ্ণুপদ অধিকারীর ধানক্ষেতে নেমে ধান কাটেন। জানা যায়, ওই জমিতে ছয় জাতের ধান রোপণ করেছিলেন বিষ্ণুপদ বাবু। কৃষকদের উৎসাহ দিতে ও “সরকার কৃষকের পাশে” এই বার্তা দিতে এই প্রতীকী উদ্যোগ নেন মন্ত্রী।

তবে এই সব ছবি তোলার অনুষ্ঠানেই সরকার থেমে যায়। বাস্তব সমস্যার সমাধান মেলে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছরই লঙ্কামুড়ার কৃষকরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হন, কিন্তু ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। কৃষিঋণ মওকুফ, বীজ ও সার ভর্তুকি, সেচের সুবিধা—এসব দাবি বহুদিন ধরেই সরকারের কাছে পৌঁছেছে, কিন্তু কার্যকর হয়নি কিছুই।

এদিন সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, এই জায়গাটার নাম হল লঙ্কা মোড়া। আগে থেকে এই জায়গাটায় ভালো ফসল হয়। মহিলা, পুরুষ সবাই মিলে একসাথে তারা সবজি উৎপাদন করে, ধান উৎপাদন করে, এমনকি ফুলও উৎপাদন করে। অনেক কিছুই তারা করে। আজকে এক ভদ্রলোক সরকারি সাহায্য নিয়ে, উনার নাম হল বিষ্ণুপদ অধিকারী।

উনি ছয় ধরনের, একটা প্লটে একটা প্লটকে ভাগ ভাগ করে, পাঁচখানি জায়গাকে ভাগ করে উনি ছয় ধরনের ধান এখানে ফলীয়েছেন। ব্ল্যাক রাইস, হরি নারায়ন, কালিকাশা, বিনি, বাসমতি এবং কালো মানিক। এই ছয় ধরনের ধান উৎপাদন করিয়েছেন এবং হারভেস্টিং এর টাইমও করেছেন। এখন ফসল কাটার সময়, এজন্য ভদ্রলোক আমাদের ডিডিএ এবং কৃষি দপ্তরের সাথে কথা বলে, যেহেতু কৃষি দপ্তরও কিছু সহযোগিতা করেছে।

যদিও সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ওনার, কিন্তু আমরা এসে একটু এই এলাকায় কৃষকদের আরো মনোবল বাড়ানোর জন্য, আমরা আজকে ধান কাটায় অংশগ্রহণ করেছি। আজকে শুরুয়াত করেছে ধান কাটা এবং খুব ভালো ফলন হয়েছে। এখনো ছয় ধরনের যে সবগুলি পেকেছে, এই আস্তে। কিছুদিনের মধ্যে সবগুলি পেকে যাবে।

আপনারা দেখছেন ধান ক্ষেত গুলি, খুব ভালো প্রোডাকশন, এবার এমনিতেই সারা রাজ্যে খুব ভালো ভালো ফলনের, ধানের ভালো ফসল ফলন হয়েছে। আমরা আশা করি আমাদের রাজ্যে বর্তমানে তিনটা জেলা খাদ্য স্বয়ংভর এবং ৫৮ টা ব্লকের মধ্যে ৩০ টা ব্লক খাদ্য স্বয়ংভর। কিন্তু এবার আমরা আশা করছি আরো কিছু জেলা, বিশেষ করে খোয়াই, ধলাই, এ দুটো জেলা খাদ্য স্বয়ংভর হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর।

যদি প্রকৃতি বিরূপ না হয়, তাহলে খুব ভালো ফসল এবার হবে এবং আরো দুইটা জেলাকে আমরা খাদ্য স্বয়ংভরের তালিকায় যুক্ত করতে পারি।

এদিন উপস্থিত ছিলেন, প্রাক্তন বিধায়ক ডক্টর দিলীপ দাস তিনজন কাউন্সিলর কর্পোরেটর সহ আরো অনেকেই।

এদিন তিনি আরও বলেন, আমরা রিপার আমরা দিচ্ছি সাবসিডি তে, প্রচুর যন্ত্রপাতি দিচ্ছি, কারণ কৃষি শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে, কারণ মানুষ মোটামুটি ভালো পরিস্থিতিতে রয়েছে, সামাজিক অর্থনৈতিক দিকে। সেইজন্য, কিন্তু যতই অর্থনৈতিক উন্নতি হোক, বিভিন্ন দেশের চাল না আসলে আমাদের দেশের মানুষ অনেকে অভুক্ত দেখত।

আজকে আমরা উল্টো বিভিন্ন দেশকে চাল রপ্তানি করি, মাছ রপ্তানি করি, ডিম রপ্তানি করি, আরো অনেক কিছু দুধ রপ্তানি করি। সুতরাং, এবং পৃথিবীর মধ্যে সব চেয়ে বেশি চাল উৎপাদনে আমরা সেকেন্ড হলেও, কিন্তু রপ্তানিতে আমরা ফাস্ট।

সুতরাং আমাদের প্রোডাকশন হিউজ, গতবার দারুন ফসল হয়েছে সারা দেশে, এবারও ভালো ফসল হবে এবং আমাদের রাজ্যে সবাই মিলে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কৃষি আমাদের ভিত্তি। কৃষি বলতে শুধু ধান নয়, কৃষি বলতে ধান, মাছ, ডিম, দুধ, মাংস, সবজি, ফল, ফুল এগুলি সব হলো এগ্রি এলায়েন্স।

সবাইকে নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে হবে এবং ত্রিপুরাকে আমরা এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা বানানোর জন্য, আমাদের রাজ্য সরকার যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এতে
কৃষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। ১০০ এর মধ্যে ৪৬% কাজ দিয়েছে। তো, এর জন্য আমরা কৃষকদের আরো সহযোগিতা করতে চাই।
এদিন এই বার্তা দেন মন্ত্রী রতন লাল নাথ।

“মন্ত্রী মাঠে নামেন, ছবি তোলেন, কিন্তু ফসল নষ্ট হলে কেউ খোঁজও নেন না।”

প্রশ্ন উঠছে, যদি সত্যিই কৃষকের পাশে দাঁড়াতে চান মন্ত্রী, তাহলে কেন ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ সময়মতো দেওয়া হয় না? কেন কৃষি-বীমা প্রকল্পের সুবিধা গ্রামীণ কৃষকের হাতে পৌঁছায় না?

জনগণের মতে, মাটির গন্ধে ভরা মন্ত্রীর কয়েক ঘণ্টার ‘কৃষক সেজে নামা’ যতটা রাজনৈতিক প্রদর্শনী, তার চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন মাঠের কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা। কৃষকের মনোবল বাড়বে না কাচি হাতে ফটো তোলায়—বরং বাড়বে তখনই, যখন সরকার তাদের কথা শুনবে, সমস্যার সমাধান করবে, এবং প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ দেবে।

লঙ্কামুড়ার কৃষকরা এখনো সেই দিনটির অপেক্ষায়—যেদিন মন্ত্রী শুধু মাঠে নামবেন না, মাঠের মানুষের ভাগ্যও বদলে দেবেন।

For All Latest Updates

ভিডিও