Interracial Marital Controversy : ত্রিপুরায় আবারও নতুন রাজনৈতিক ঝড় উঠেছে। কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এক অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়— আন্তঃজাতি বিবাহ এবং জনজাতি সুবিধা। তিপ্রা মথা দলের বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা জাতীয় তফসিলি উপজাতি কমিশনের কাছে সম্প্রতি একটি চিঠি পাঠিয়ে দাবি তুলেছেন, জনজাতি যুবতীরা যদি অ-জনজাতি যুবকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তবে তাঁদের সমস্ত সরকারি এসটি সুবিধা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।
বিধায়কের অভিযোগ, ত্রিপুরায় বহু অ-জনজাতি যুবক কৌশলে এসটি মহিলাদের বিয়ে করছেন। উদ্দেশ্য একটাই— আর্থিক সুবিধা ভোগ করা। তাঁর দাবি অনুযায়ী, বিবাহের পর অনেক ব্যবসা যেমন পেট্রোল পাম্প, গ্যাস এজেন্সি কিংবা রেশন দোকান স্ত্রীর নামে চালানো হচ্ছে। ফলে কর ফাঁকি দেওয়া সহজ হচ্ছে, আবার বিভিন্ন ভর্তুকি ও সুবিধাও ভোগ করা যাচ্ছে। এমনকি টিটিএএডিসি অঞ্চলে জনজাতি স্ত্রীর নামে জমি কিনে রাবার বাগান কিংবা ইটভাটা চালানোর অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
এই দাবির পরই রাজ্যে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। মূল প্রশ্ন উঠছে— একজন মহিলা যদি নিজের ইচ্ছায় বা ভালোবেসে অন্য সম্প্রদায়ের কাউকে বিয়ে করেন, তবে কি তাঁর সাংবিধানিক অধিকার বাতিল হয়ে যাবে?
সমাজকর্মী ও আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রস্তাব নারীর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। ভারতীয় সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে স্বাধীনভাবে বিবাহের অধিকার দিয়েছে। বিবাহ একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, সেটিকে সরকারি সুবিধার সঙ্গে যুক্ত করলে তা সংবিধানবিরোধী হতে পারে। পাশাপাশি, এ ধরনের পদক্ষেপ সমাজে বিভাজন বাড়িয়ে সম্প্রীতি নষ্ট করবে বলেই আশঙ্কা।
তবে অন্যদিকে, রঞ্জিত দেববর্মার সমর্থকরা বলছেন, এসটি সুবিধা মূলত পিছিয়ে পড়া উপজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য। কিন্তু যদি এই সুবিধা অ-জনজাতি পরিবারগুলির হাতে চলে যায়, তবে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হবেন। তাঁদের মতে, কর ফাঁকি রোধ ও উপজাতি সমাজের অধিকার রক্ষার জন্য কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন।
রাজনীতির ময়দানেও মতভেদ স্পষ্ট। কিছু দল বিধায়কের দাবিকে সমর্থন করছে, আবার অনেকেই বলছে— এ উদ্যোগ জনজাতি ও অ-জনজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি করবে, যা রাজ্যের ঐক্যের পরিপন্থী।
তথ্যবিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যদি এই প্রস্তাব কার্যকর হয়, তবে ত্রিপুরার সামাজিক কাঠামোতে বড় প্রভাব পড়তে পারে। আন্তঃজাতি বিবাহ নিরুৎসাহিত হবে, মহিলারা অপ্রয়োজনীয় সামাজিক চাপের মুখে পড়বেন। ফলস্বরূপ বহু পরিবারে বিভাজন দেখা দিতে পারে।
সব মিলিয়ে, এই বিতর্ক এখন পৌঁছেছে জাতীয় তফসিলি উপজাতি কমিশনের টেবিলে। কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই দেখার বিষয়। তবে একথা স্পষ্ট— একদিকে জনজাতি সমাজের ন্যায্য অধিকার রক্ষার প্রশ্ন, অন্যদিকে নারীর ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এখন ত্রিপুরা রাজনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ত্রিপুরার আড্ডা থেকে রাজনীতির মঞ্চ— সর্বত্রই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই ইস্যু। আর এই বিতর্ক দীর্ঘদিন রাজ্যের সমাজ ও রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবেই।