Child Marriage News : ত্রিপুরার বিশালগড় এলাকায় ঘটে যাওয়া এক হৃদয়বিদারক ঘটনার খবরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মাত্র ১৪ বছর বয়সী এক নাবালিকা, বিয়েতে রাজি না হওয়ায়, আপন মা-বাবার হাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। পরিবারের চাপে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে ঘরে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, পরে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। একই রকম পরিস্থিতির মুখে পড়ে আরেক কিশোরীও।
নাবালিকারা বর্তমানে বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক কিশোরী মারধরের হাত থেকে কোনোভাবে পালিয়ে গিয়ে তার ঠাকুমার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। পরবর্তীতে, একই পরিস্থিতিতে আরেক নাবালিকাকেও ভর্তি করা হয়।
এই ঘটনা সামনে আসতেই ত্রিপুরা শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন জয়ন্তী দেববর্মা নিজে সরেজমিনে বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছান। সঙ্গে ছিলেন অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক আধিকারিকরা। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে নাবালিকাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিস্তারিত খোঁজ নেন।
জয়ন্তী দেববর্মা বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কোনো অভিভাবক কীভাবে নিজের সন্তানের ওপর এমন নির্দয় আচরণ করতে পারে, তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি, দুই কিশোরীর নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে আমরা প্রয়োজনীয় সব রকম সহায়তা ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিচ্ছি।”
বাল্যবিবাহের সামাজিক শিকড়
ত্রিপুরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও বাল্যবিবাহ একটি বড় সামাজিক সমস্যা। যদিও আইনত বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ অবৈধ, তবুও অনেক পরিবার অল্প বয়সেই কন্যা সন্তানদের বিয়ে দিতে মরিয়া থাকে। যেকোনো ধরনের আপত্তি বা অস্বীকৃতি অনেক সময় নির্মম শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি মা-বাবারাই হয়ে ওঠেন নির্যাতনের উৎস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শিক্ষা বন্ধ হয়ে যায়, এবং পরবর্তী জীবনে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়।
প্রশাসনের ভূমিকা ও করণীয়
এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করলেই শেষ হবে না, প্রয়োজন তৃণমূল স্তরে সচেতনতা বাড়ানো এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। স্কুল, গ্রাম পঞ্চায়েত ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে একত্রে কাজ করে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে হবে।
ত্রিপুরা শিশু কমিশন জানিয়েছে, এই দুই নাবালিকার চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তারা নেবে। পাশাপাশি, মনোবিদদের সহায়তায় মেয়েদের মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।
এই ধরনের ঘটনা সমাজের অন্ধকার দিক তুলে ধরে, যেখানে মেয়েদের ইচ্ছা, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ে। এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচার যেন উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়—এটাই কাম্য।