খবরে প্রতিবাদ

খবরে প্রতিবাদ

Monday, 28 July 2025 - 04:42 PM
সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫ - ০৪:৪২ অপরাহ্ণ

Sudip Roy Barman : তিপ্রা মথার বিরুদ্ধে সুর চরালেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন

Sudip Roy Barman
1 minute read

Sudip Roy Barman : ত্রিপুরার রাজনীতিতে ফের বিতর্কের ঝড়। রাজ্যের কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন এবার সরাসরি আক্রমণ শানালেন তিপ্রা মথা দলের বিরুদ্ধে। ভোটার তালিকার স্পেশাল রিভিশন (Special Intensive Revision) প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, এই প্রক্রিয়া প্রকৃত আদিবাসী ও ভূমিপুত্র ত্রিপুরাবাসীদের ভোটাধিকারকে বিপন্ন করতে পারে।

“ডকুমেন্টের নামে একাধিক ভোটার বঞ্চিত হবেন”
“আমরা সবাই চাই ভোটার তালিকায় শুধু জেনুইন নাম থাকুক—মৃত, ভুয়ো বা বিদেশি কারোর নাম যেন না থাকে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় যদি প্রকৃত ত্রিপুরাবাসীদের নাম বাদ পড়ে যায়, সেটা হবে ভয়ানক অন্যায়।”

তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে তিপ্রা মথার দাবি আদিবাসী ভোটারদের বিপদে ফেলবে। কারণ বহু আদিবাসী পরিবার, যারা যুগের পর যুগ ধরে ত্রিপুরায় বসবাস করছেন, তাদের কাছে জন্মসনদ, স্কুল সার্টিফিকেট বা অন্যান্য পরিচয়পত্র নেই।

“এখন যদি এসব নথি ছাড়া নাম রাখা না যায়, তাহলে তো হাজার হাজার আদিবাসীর নাম বাদ পড়বে। এটা তাদের প্রতি অবিচার।”

“যারা বিদেশ থেকে এসেছে, তাদের কাগজ ঠিকঠাক; যারা দেশি, তারা বঞ্চিত”
সুদীপবাবুর মতে,

“যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন এবং এখানে নাগরিকত্ব পেয়ে গেছেন, তাদের কাগজপত্র নিখুঁত থাকে। কিন্তু যারা এ দেশের, এ ভূমির, যুগ-যুগ ধরে বসবাসকারী আদিবাসী, তাদের অনেকের কাছেই ডকুমেন্ট নেই। সেটা তো এই প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় অসংগতি।”

তিনি জানান, নির্বাচন কমিশন যেসব ডকুমেন্ট চাইছে—বিশেষ করে বিহার বা অন্যান্য রাজ্য থেকে যে নথি লাগবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—সেগুলো অধিকাংশ আদিবাসীদের পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব।

“ত্রিপুরার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বহু পরিবার এখনও পর্যন্ত আধার বা জন্ম সনদ পর্যন্ত বানায়নি। তাদের দোষ কী?”

“ভোটার তালিকা নয়, নাগরিকত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক”
তিনি একাধিকবার স্পষ্ট করেন, বিদেশি নাগরিক চিহ্নিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের নয়।

“এটা হোম ডিপার্টমেন্টের কাজ। নির্বাচন কমিশনের কাজ হল যোগ্য ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা, বাদ দেওয়া নয়।”

“কাট-অফ ডেট ঠিক না করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে”
তিপ্রা মথার উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন তোলেন-

“তোমাদের নাগরিকত্বের কাট-অফ ডেটটা কী? ২৫শে মার্চ ১৯৭১, না কি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪? না কি উগ্রপন্থীরা যেমন বলেছে, ১৯৫১? আগে সেটা তো ঠিক করো।”

তিনি বলেন, এই বিভ্রান্তিকর অবস্থান সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে এবং রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিজেপিকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ,
“পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে বিজেপি বলেছিল, ছয় মাসের মধ্যে আদিবাসীদের জন্য বিপুল উন্নয়ন হবে। এখন ১৮-১৯ মাস পেরিয়ে গেছে—কিছুই হয়নি। এখন সেই ব্যর্থতা ঢাকতেই নতুন নতুন ইস্যু তোলা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, তিপ্রা মথা এবং বিজেপির মধ্যে যে বোঝাপড়ার রাজনীতি চলছে, তা আসলে জনসাধারণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর কৌশল।

“মানুষ যাতে এই সরকার ও দলের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন না তোলে, তাই এখন এই তথাকথিত ভোটার তালিকা সংস্কারের নাটক চলছে।”

তিনি বলেন, “জেনুইন ভারতীয় নাগরিকদের বাদ দিলে চলবে না”
সবশেষে সুদীপ রায় বর্মন জানান,

“আমরা ত্রিপুরার প্রকৃত নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট। যারা বছরের পর বছর এখানে আছেন, যারা ভারতের নাগরিক, তাদের কোনোভাবেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া চলবে না। সেটা যে দলই করুক, আমরা বিরোধিতা করব।”

এই বিতর্ক এমন সময় সামনে এলো যখন ত্রিপুরা রাজ্যে আদিবাসীদের ভোটের প্রভাব ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তিপ্রা মথা দল সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোটার তালিকা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে, যেখানে “অবৈধ” নাম বর্জনের আহ্বান করা হয়। তবে বিরোধীদের মতে, এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এবং সমাজের এক বিশাল অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র।

For All Latest Updates

ভিডিও