Micro Finance company Belonia
মাইক্রো ফাইনান্সের যন্ত্রণায় রাজ্যের একাংশ গ্রাহকের নাজেহাল অবস্থা। বেছে নিতে হচ্ছে আত্ম হত্যার পথ নতুবা ছাড়তে হচ্ছে ভিটে মাটি। এমনই এক পরিস্থিতির শিকার হয়ে সপরিবারে আইনের দ্বারস্থ হলেন জনৈক হতদরিদ্র।
উল্লেখ্য রাজ্যের সর্বত্রই ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে এই মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানি গুলো। বাদ যায়নি বিলোনিয়া মহকুমা ও। সাধারণ জনগণ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের দরজায় ঋন নিতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন বলে অবশেষে এই ফাইনান্স কোম্পানির দিকে পা বারান। সাধারণত এই ফাইনেন্স কোম্পানিতে গেলেই ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড জমা দেওয়ার পর অতি সহজেই ঋন গ্ৰহিতারা ঋন পেয়ে যায়। তারপরই শুরু হয় এই মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানির আসল খেলা।
প্রতিমাসে সুদ এবং কিস্তির টাকা আদায় নিয়ে এদের নানা বিধ নির্যাতনের শিকার হতে হয় অসহায় গ্রাহকদের। ঋন গ্ৰহিতারা কোন কারণে এক মাস ঋন দিতে না পারলে মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানির কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে শুরু হয়ে যায় মানসিক অত্যাচার । আর তাতেই অসহ্য হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অনেকেই।
এবার এই এক মাসের মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানির ঋনের টাকা দিতে না পারায়, এক হত দরিদ্রের বাড়ি গিয়ে তার ঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিল এক মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানির দুই কর্মী যা সম্পূর্ণ ভাবে বেআইনি।
আর ঘটনা জানতে পেরেই সেই কোম্পানির দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলেন মহকুমা প্রশাসন। এ বিষয়ে ডিসি এম সঞ্জয় শীল কি বলছেন শুনুন সেই বক্তব্য-
এই ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার সকালে বিলোনিয়া থানাধীন চিত্তামারা নাথ পাড়ার রঞ্জিত রুদ্র পালের বাড়িতে । ঘরের দরজায় তালা দেওয়ার ফলে খাওয়া দাওয়া ছাড়াই সারাদিন রাত ঘরের বারান্দায় থাকতে হয়েছে রঞ্জিত রুদ্র পাল সহ তার পরিবারকে । এই দিকে অসুস্থ ছোট পুত্র সন্তানের মুখে ঔষধ অব্দি তুলে দিতে পারে নি হত ভাগ্য পিতা মাতা । এছাড়া বড়ো মেয়ের লেখা পড়া বন্ধ হয়ে গেল ঘরের দরজায় তালা থাকাতে। হতভাগ্য পিতা মাতা লোক লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে চোখের জল ফেললেন ঘরের বাইরে বশেই। তবে এতো বড় ঘটনা চেপে থাকার বিষয় নয়। আর এই ঘটনা জানাজানি হতেই ছিঃ ছিঃ রবের পাশাপাশি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন জনগণ মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানির বিরুদ্ধে।
এই মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানির নাম বেদিকা ক্রেডিট ক্যাপিটাল লিমিটেড । বিলোনিয়া সাতমুড়া এলাকাতে এর শাখা অফিস রয়েছে। এই ঘটনা মহাকুমা প্রশাসনের নজরে আসতেই শাখা অফিস পরিদর্শন করেন মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ ডিসিএম সঞ্জয় শীল সহ অন্যান্য অফিসাররা বেদিকা ক্রেডিট ক্যাপিটাল লিমিটেড বিলোনিয়া শাখা অফিসে গিয়ে শাখা সঞ্চালকের সাথে দেখা করে এই কোম্পানির কাগজপত্র খতিয়ে দেখেন। এরমধ্যে ডিসিএম শাখা সঞ্চালককে আর বি আই প্রেসক্রাইব রেট অনুসারে কত টাকা পর্যন্ত ঋণ শোধ নেওয়া যায়, মাইক্রো ফাইন্যান্স কোম্পানি চালাতে গেলে সরকারের কি কি শর্ত মানতে হবে এবং তাদের আইডেন্টি প্রুভ আছে কিনা ডিসিএম সঞ্জয় শীল জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি শাখা সঞ্চালক সহ কোম্পানির ঋন আদায় কারী দুই কর্মী। পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স দেখাতে পারেননি শাখা সঞ্চালক।
সাথে সাথে বেদিকা ক্রেডিট ক্যাপিটাল লিমিটেড বিলোনিয়া শাখা অফিসের দরজায় তালা ঝুলিয়ে সিল করে দিল বিলোনিয়া মহকুমা প্রশাসন । ঋন গ্ৰহিতার বাড়িতে দরজায় তালা ঝুলানোর বিষয় নিয়ে আইনি প্রক্রিয়া সহ শোকজ নোটিশ পাঠাবেন বলে জানান ডিসিএম সঞ্জয় শীল
ট্রেড লাইসেন্স বিহীন এধরণের মাইক্রো ফাইনেন্স কোম্পানি গুলি রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যাদের কবলে পরে সহসাই নানা বিধ মানসিক চাপের সম্মুখীন বহু গ্রাহক। এদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখাই বরং শ্রেয়। অন্যথা অবশ্যই যাচাই বাছাই করেই এধরণের ফাইনান্স থেকে ঋণ গ্রহন করা উচিৎ গ্রাহকদের।