India Bangladesh Border haat : সাব্রুম ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত হাট
সীমান্ত হাট, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রী বন্ধন সুদৃঢ় করার এক অভিনব উদ্যোগ। ত্রিপুরায় এখনো পর্যন্ত দুটি সীমান্ত হাট রয়েছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে সিপাহীজলা মহকুমার কমলাসাগর বিধানসভায় কসবেশ্বরী কালি মন্দিরের সন্নিকটে নির্মিত সীমান্ত হাট অপরটি হচ্ছে দক্ষিন ত্রিপুরার সাব্রুম মহকুমার শ্রীনগরে গড়ে উঠা ভারত বাংলা সীমান্ত হাট। যদিও করোনা কালীন পরিস্থিতিতে সীমান্ত হাট গুলি বন্ধ হয়ে পরেছিল। এর পর কমলাসাগরের সীমান্ত হাটটি আর পুনরায় চালু হয়নি। তবে বর্তমানে রাজ্যের দক্ষিণাংশের এই সীমান্ত হাট উন্মুক্ত রয়েছে দুই প্রান্তের ক্রেতা বিক্রেতা দের জন্য।
এই সীমান্ত হাট এমন একটি মিলন স্থল যেখানে পন্য আদান প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক উপার্জন ও দুই দেশের মানুষের অবাধে মেলামেশা দুটোরই রয়েছে সুযোগ।
ত্রিপুরার দক্ষিন অংশের সাব্রুম মহকুমার শ্রীনগর এবং ওপার বাংলাদেশের ছাগল নাইয়া উপজেলার মধ্যবর্তী জিরো পয়েন্টে এই সীমান্ত হাট নির্মাণ করা হয়েছে। বর্ডার লাগোয়া অঞ্চলে নির্মিত এই হাটে পৌঁছাবার জন্যে নিয়মিত কোনো যানবাহন চলাচলের সুবিধে নেই। যারাই সীমান্ত হাটে গিয়েছেন কিংবা যেতে ইচ্ছুক তারা হয় নিজস্ব গাড়ি করে কিংবা রিজার্ভ করে গাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। তবে দুরত্ব যতটাই হোক , সপ্তাহে এক দিন রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে বহু মানুষ এর সমাগম দেখা যায় সীমান্ত হাটে সেটা অস্বীকার করা যায়না।
দুই প্রান্তের ব্যবসায়ীরা এই সীমান্ত হাটের মধ্যে দিয়ে যার যার দেশের নিজস্ব উৎপাদিত জিনিসপত্র অপর প্রান্তে বিক্রি করতে পারেন। আরও একটি উল্লেখ যোগ্য বিষয় হচ্ছে এখানে সমস্ত লেনদেন কর মুক্ত হয়। এছাড়া এই সীমান্ত হাটে ভারতীয় এবং বাংলাদেশ উভয় মুদ্রার ব্যবহার রয়েছে। এই নয়া উপায়ে ব্যবসা বানিজ্য করার বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান , এই সীমান্ত হাট নির্মাণের কারণে দুই প্রান্তের মানুষের ও যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে। ব্যবসা বাণিজ্যের দিক থেকে যেমন আয় উপার্জনের পথ প্রশস্ত হয়েছে তেমনি দুই প্রান্তের মানুষ সপ্তাহে এক দিনের জন্যে হলেও কাঁটা তারের বিভেদ ভুলে এক মাটিতে দাঁড়িয়ে বন্ধু সুলভ বন্ধনে আবদ্ধ হবার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছেন।
উল্লেখ্য, প্রত্যেক মঙ্গলবারে সকাল ১০ টা থেকে শুরু হয় এই হাট বাজার। শেষ হয় প্রায় বিকেল ৪টা নাগাদ। নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেতা বিক্রেতারাই বাজারে প্রবেশের জন্যে টিকিট গ্রহন করতে পারেন। একদিনের হাট বাজারে দুই প্রান্ত থেকে সর্বমোট প্রায় ২০০০ লোক এর প্রবেশের অনুমতি থাকে। টিকিট সংগ্রহের জন্যে প্রায় ভোর রাত থেকেই লাইনে দাড়াতে দেখা যায় লোক জনদের। যারা পন্য সামগ্রী বিক্রি করতে আসেন তাদের কাছে ভেন্ডার কার্ড থাকায় লাইন ব্যাতিতই তাদের প্রবেশের অনুমতি থাকে। সীমান্ত হাটের এপারে বিএসএফ এবং ওপারে বিজিবি এর কড়া নজরদারির মধ্যে দিয়েই গোটা দিনের হাট বাজার সম্পন্ন হয়।
ভেন্ডারদের কাছে যে ভেন্ডি কার্ড থাকে তা স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়। যার মধ্যে দিয়ে পন্য সামগ্রী নিয়ে হাটের ভেতরে প্রবেশ করেন বিক্রেতারা। এর পর ক্রেতাদের আলাদা লাইন এ দাঁড়িয়ে সিকিউরিটি চেকিং এর মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করতে হয় হাটে।
যে নির্দিষ্ট আয়তনে হাটটি নির্মিত রয়েছে তার মাঝ বরাবর একটি পিলার রয়েছে। যার এক প্রান্তে ভারতের সীমানা অপর প্রান্তে বাংলাদেশের সীমানা। যার যার সীমানা জুড়েই ভেন্ডার রা নিজেদের পন্য সাজিয়ে বসে পরেন। বাংলাদেশের পন্য সামগ্রির মধ্যে সবচাইতে বেশি নজর কাড়ে নানা রকমের ইলিশ মাছের সমাহার। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরণের বেকারি বিস্কিট, রয়েছে কাচা শাক সবজি, আরএফএল এর প্লাস্টিক সামগ্রী, রয়েছে ছোটদের জন্যে প্ল্যাস্টিকের খেলনা। এছাড়া বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ শুটকি মাছ এর বিশাল সম্ভার রয়েছে। সব চাইতে বড় বিষয় এই সমস্ত কিছুই পাওয়া যায় অতি অল্প দামে।
যে কারণে বাংলাদেশ থেকে আমাদের ভারতীয় বাজারে বহু পন্য ক্রয় করে এনে বিক্রয় করা হয়ে থাকে অধিক মুনাফা লাভের জন্যে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ইলিশ এবং প্ল্যাস্টিকের বস্তু সামগ্রী ভারতীয় বাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ঢাকাই জামদানি শাড়ির ও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে এখানে। তবে এই সমস্ত কিছুই খুব অল্প দামে বিক্রি হয় এই সাব্রুম সীমান্ত হাটে।
সার্বিক সুযোগ সুবিধা থাকলেও তার সাথে কিছু না কিছু অসুবিধার ও সম্মুখীন হতে হয় স্থানীয়দের। হাটে আগত ক্রেতাদের কয়েকজনের সাথে কথা বললে উঠে আসে নানা অভিযোগ। বাংলাদেশ থেকে যে সমস্ত পন্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয় তা ক্রয় করে ভারতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে বাঁধা প্রাপ্ত হতে হয় ক্রেতাদের। এমনকি মাঝে মাঝেই বিএসএফ এবং কাস্টম অফিসার কর্তৃক বহু ক্রেতার কাছ থেকে পন্য সামগ্রী হাতিয়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এসব জেনেও শ্রীনগর থানার পুলিশ বাবুদের কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়না বলেও অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
তবে সব মিলিয়ে এটুকু বলা যায় যে সাব্রুম এর শ্রীনগরে নির্মিত এই সীমান্ত হাটের কারণে সপ্তাহে একদিন বিক্রেতাদের ভালো উপার্জনের সুযোগ থাকে। তাছাড়া দক্ষিন ত্রিপুরার সাব্রুমের এই সীমান্ত হাট বর্তমানে ত্রিপুরার পর্যটন ক্ষেত্রে এক অনন্য জায়গা করে নিয়েছে। কিছু কিছু জটিলতা গুলিকে উপেক্ষা করলে দেখা যায় এই সীমান্ত হাট বাস্তবিক রুপেই দুই প্রান্তের মানুষের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক স্থাপনে এই অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে চলেছে। যাতে লাভবান হচ্ছেন ভারত বাংলা উভয় প্রান্তের মানুষ।