Dhanpur khejur News : শীতের মরশুম মানেই কনকনে হাওয়া, বিকেল হতেই হাল্কা কুয়াশা, গরম গরম পিঠে পুলি আর সাথে খেজুর এর লালি। কি শুনেই মুখে জল চলে এলো তাই না ?
গ্রামে গঞ্জে আজো লালির চাহিদা কিন্তু অনেক। ভোর হতেই কাচি , মাটির কলশী আর সুতো নিয়ে খেজুর গাছের সন্ধ্যানে বেড়িয়ে পড়েন গাছিয়ারা। সেই সুউচ্চ গাছে উঠে তাতে বেঁধে দেন কলশী। গোটা দিন ব্যাপি খেজুর এর রস জমার পরে তা সংগ্রহ করে আনেন। এরপর উনুনের তাপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাক দিয়ে বেড় করা হয় সেই লালি। সুস্বাদু সেই লালির বাজারে ও চাহিদা অনেক।
শহরাঞ্চলের মানুষ সচরাচর এই লালি পাবেন কোত্থেকে ? তাই তাদের কথা ভেবে আজকাল শহরজাত করে তোলা হচ্ছে লালি। এই লালি ও খেজুর এর রস এর গল্প ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া মহকুমা জুড়ে প্রসিদ্ধ। সোনামুড়া তেই সব চাইতে বেশি খেজুর এর গাছ রয়েছে বলে শোনা যায়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শীতের মৌসুমে সোনামুড়ার মেলাঘর সহ তার আশেপাশের এলাকা গুলিতে খেজুরের রস সংগ্রহের কাজ চলছে। এবার ধনপুর এলাকা থেকে উঠে এলো এমনই এক চিত্র। যেখানে এক গাছিয়া কঠোর পরিশ্রম করছেন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্যে।
তবে বিশুদ্ধ লালি ও নলেন গুঁড় পাওয়া এখন অনেকটাই দুর্বিষহ বিষয়। কারণ অধিক মুনাফার লোভে একাংশ ব্যবসায়ী খেজুরের রসের সাথে অনেক কিছু মিশ্রণ করে সেই লালি বাজারজাত করছেন। তবে কিছু সংখ্যক আছেন যারা আজো লালি ও নলেন গুঁড়ের ঐতিহ্য ও গুনগত মান ধরে রাখার আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তার মধ্যে একাংশ গাছিয়াল খুবই সুস্বাদু এবং সুগন্ধিযুক্ত লালি এবং নলেনের গুড় বিক্রি করে। এরা ভেজালমুক্ত গাছিয়াল। বিশেষ করে কাঠালিয়া বাজারে বা সোনামুড়া মহকুমার অন্তর্গত মোহনভোগ বাজারে লালি বিক্রি হয়। তার মধ্যে কাঠালিয়া বাজারে সবচেয়ে বেশি। উল্লেখ করা বিষয় নতুন করে খেজুর গাছিয়াল এর কাজে এখন আর কেউ যুক্ত হচ্ছে না। পুরানো গাছিয়ালরাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারো গাছ কাটা শুরু করে দিয়েছে।
তার মধ্যেই এখজন হলেন কাঠালিয়া ব্লকের অন্তর্গত দক্ষিণ মহেশপুরের কৃষ্ণ মজুমদার নামে কমবয়সী এক গাছিয়াল। ২৫ টি খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন উনি । গত বছর বিক্রি করেছিলেল প্রতি লিটার ৩৫০ টাকা। কৃষ্ণ মজুমদার জানান সমস্ত জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে চলছে। কাজেই এই গাছ কাটা বড় কষ্টকর এবং পরিশ্রম হয় । ১ লিটার লালি বিক্রি করতে হবে ৪০০ টাকায় নতুবা লাভের মুখে দেখা যাবে না!
অপরদিকে মোহনভোগ ব্লকের অন্তর্গত চন্দুল এডিসি ভিলেজ এলাকায় নিকুঞ্জ দাস নামে অপর এক বয়স্ক গাছিয়াল চলতি মৌসুমে 15 টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার তা বিক্রি করে পেট চালাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন মেলাঘরে চন্ডিগড় থেকে এসে উপজাতি এলাকায় খেজুর গাছ কেটে যাচ্ছেন তিনি। এবার তিনি ১৫ টি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানান,শীত যত বাড়বে রস তত ভালো হবে এবং পরিষ্কার হবে।
এছাড়া পোড়ামাটি হাড়িতে করে রস সংগ্রহ করলে ঐ সমস্ত হাড়িগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয় । তবেই লালির সুগন্ধ বাড়বে। অভিজ্ঞতার নিরিখে নিকুঞ্জ দাস জানান বহু বছর ধরে খেজুর গাছ কেঁটে অভ্যস্ত উনি। কাজেই কঠোর পরিশ্রম করতে হয় খেজুর গাছ কাটাতে। ভোরের আলো ফোঁটার আগেই খেজুর গাছ থেকে রসের হাড়ি নামিয়ে আনতে হয়। নতুবা বিভিন্ন পাখির মলমূত্র হাড়িতে পড়ে যেতে পারে। তাতে যথেষ্ট ক্ষতি হয় রসের।
কাজেই যারাই খেজুরের রস খাওয়ার পিপাসা হয়, গাছিঃয়াল চিহ্নিত করে খেজুরের রস পান করা উচিত! এমনটাই জানালেন দক্ষিণ মহেশপুরের কৃষ্ণ মজুমদার এবং মোহনভোগ ব্লকের অন্তর্গত চন্ডিগড়ের গাছিয়ার নিকুঞ্জ দাস। বাজারে অবশ্য সেই বিশুদ্ধ লালি ও রস পাওয়া দুস্কর। তবে এখনো যারা এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন সেটাই অনেক বড় বিষয় ।



