খবরে প্রতিবাদ

খবরে প্রতিবাদ

Monday, 14 July 2025 - 01:32 AM
সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫ - ০১:৩২ পূর্বাহ্ণ

Tripura Charilam News : যিনি দলের জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন, আজ তিনিই অবহেলিত

Tripura Charilam News
1 minute read

Tripura Charilam News : বিজেপির রাজনীতি আজ প্রমাণ করে, ত্যাগ শুধু স্লোগানে থাকে, বাস্তবে তার কোনো মূল্য নেই।
বাঁশতলির নলজলা এলাকায় বিজেপির নিষ্ঠাবান কর্মী আজ অবহেলিত, মুখ্যমন্ত্রীর দারস্থ অসহায় পরিবার

এককালে বিজেপির জন্য প্রাণ পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত ছিলেন যিনি, আজ সেই মফিজ মিয়া বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্যের আশায় দিন গুনছেন। ঘটনাটি বিশ্রামগঞ্জ থানার অন্তর্গত বাঁশতলী এডিসি ভিলেজ কমিটির নলজলা এলাকার। রাজনৈতিক সংঘর্ষে মারাত্মকভাবে আহত এই একনিষ্ঠ বিজেপি কর্মী আজ দলীয় অবহেলার নিদর্শন হয়ে উঠেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত প্রায় তিন বছর আগে ধনপুর বিধানসভার উপনির্বাচনের সময়। জনজাতি মোর্চার সিপাহীজলা জেলা নেতৃত্ব কানু রাজ দেববর্মা মফিজ মিয়াকে ও আরও কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে নিয়ে যান ধনপুরে প্রচারে। সেখানেই ঘটে রাজনৈতিক সংঘর্ষ। মফিজ মিয়ার আড়াই লক্ষ টাকার বাইক আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়, ছিনতাই হয় মোবাইল, এবং নৃশংসভাবে ভেঙ্গে ফেলা হয় তার একটি হাত ও পা।

চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় আগরতলা জিবিপি হাসপাতালে। ১০ দিনের চিকিৎসার পর যখন তিনি বাড়ি ফেরেন, তখন আর আগের মতো হাঁটাচলা বা কাজকর্ম সম্ভব হয় না। গত তিন বছর ধরে শয্যাশায়ী মফিজ মিয়া আজ পরিবারের বোঝা। তাঁর স্ত্রী মিঠু বেগম দিনমজুরের কাজ করে সংসার ও স্বামীর চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

ঘটনার সময় চড়িলামের মন্ডল সভাপতি ছিলেন রাজকুমার দেবনাথ। বহুবার তার কাছে গিয়েও কোনো সাহায্য পাননি মফিজ মিয়া। পরিবর্তনের আশায় নতুন সভাপতি তাপস দাসের কাছেও গিয়েছেন, যিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েও পিছিয়ে গেছেন। অভিযোগ, একাধিকবার অনুরোধের পরেও কেউ পাশে দাঁড়ায়নি।

চোখে জল আর কন্ঠে হতাশা নিয়ে মফিজ মিয়া বলেন, “বিজেপির দুর্দিনে আমি ছিলাম রাস্তায়, আজ আমার দুর্দিনে কেউ নেই।” নতুন নেতৃত্ব, নতুন কর্মীরা তাঁকে “পুরনো পাতার মতো” ফেলে দিয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

মফিজ মিয়ার পরিবারের এখন একমাত্র ভরসা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন, যাতে সরকারিভাবে চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। বিজেপি নেতৃত্বের নীরবতা প্রশ্ন তোলে— দল কি শুধুই ব্যবহারের পাত্র খোঁজে? দুর্দিনে যারা লড়ে, সুদিনে তারা কী শুধু বিস্মৃত অতীত?

এই ঘটনা বিজেপির অন্তর্নিহিত সংকটকেই তুলে ধরে— যেখানে আত্মত্যাগীরা চরম অবহেলার শিকার হন, আর রাজনৈতিক সুবিধাবাদীরা নেতৃত্বে আসীন।

এখন দেখার বিষয়, মুখ্যমন্ত্রী কী পদক্ষেপ নেন। তবে প্রশ্ন থেকে যায়— বিজেপির ‘সংস্কার’ ও ‘সংঘ’ কি শুধুই প্রচারের বুলি? বাস্তব মফিজ মিয়াদের জন্য কি কিছুই নেই?

যে কর্মী নিজের জীবন বাজি রেখে দলের পতাকা ধরে রেখেছিলেন, আজ তিনি অবহেলিত, বিস্মৃত।
দলের সুদিন এলেও, দুর্দিনের সঙ্গীরা পড়ে রইলেন ঘরের কোণে—শয্যাশায়ী, অসহায়।

নেতৃত্ব শুধু ছবি তুলে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে গা বাঁচায়—কর্মীর যন্ত্রণা ওদের নজরে পড়ে না।
বিজেপি আজ সেই দল, যেখানে মানবিকতা নেই, আছে কেবল ক্ষমতার লোভ ও সুবিধাবাদ।
রাজনৈতিক প্রয়োজনে যাদের ব্যবহার করা হয়, সময় ফুরোলে তাদেরই ফেলে দেওয়া হয়।

এই দল শুধু ভোটের সময় দরকার পড়ে, তারপর ভুলে যায় তাদের যারা আসল ভিত্তি।
বিজেপির ‘সংঘ’ আর ‘সংস্কার’—এসব শুধু কাগজে-কলমে, বাস্তবে নিঃস্ব ও প্রতারিত কর্মীরা।
একটা প্রশ্ন বিজেপির কাছে—তাদের রক্তদানকারী কর্মীর জন্য কী আছে দলের ঝুলিতে?

For All Latest Updates

ভিডিও