Pearl farming in Tripura
জীবন ধারণের জন্যে প্রয়োজন খাদ্য, বাসস্থান আর পরিধেয় বস্ত্র। আর এই সব কিছুর জন্যেই সর্বোপরি প্রয়োজন অর্থ। সেই অর্থ উপার্জনের জন্যে কেউ বা চাকুরী নির্ভর কেউ বা বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্যের উপর নির্ভর। তবে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ও রয়েছে নানা দিক। সেক্ষেত্রে প্রথমেই যে কোনো ব্যবসা শুরু করার আগে একটা নুন্যতম পুঁজি নিয়ে ময়দানে নামতে হয়। অতঃপর তাতে লাভ লোকসান দুটোই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া ব্যবসার বিভিন্ন উপাদান এর উপর নির্ভর করে ও বোঝা যায় ব্যবসায় লাভ ক্ষতি কোণটা হতে পারে। এছাড়া ও উৎপাদনের আরেক মাধ্যম হচ্ছে কৃষি। আমাদের দেশের এখনো বেশিরভাগ মানুষ জনই কৃষি জীবী। আর সেই থেকে বাদ যায়না ত্রিপুরা ও ।
ত্রিপুরার কৃষি নিয়ে খোঁজ তল্লাশ করতে করতেই সন্ধান মিললো নতুন কিছুর। অল্প খরচ এবং পরিশ্রমে কিভাবে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা যায় সেই খোঁজ মিললো ত্রিপুরার টাকারজলা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত গাবর্দি অঞ্চলে।
গাবর্দি অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দা উমেশ চন্দ্র দেব্বরমা নিজস্ব পুকুরে চাষ করছেন মুক্তোর। বিষয়টা অনেকের কাছেই অবাক করার মতো হলেও এটা সত্যি। আমরা এতো কাল জেনে এসেছি যে সমুদ্রের গভীরে কোথাও ঝিনুকের বুকে মুক্তো জন্মায়। কিন্তু এই মুক্তো যে বাড়ি ঘরেও চাষ করা যায় এটা আজো অনেকের কাছেই অজানা। তবে উমেশ বাবু এই চাষের বিষয়ে দীর্ঘদিন পড়ালেখা করে তারপর নিজ পুকুরে এই চাষ শুরু করেছেন।
কোন কোন স্থানে করা যাবে মুক্তো চাষ?
সাধারণত দুটি স্থানেই মুক্তো চাষ হয়। একটা হচ্ছে সমুদ্রের নোনা জলে আর অপরটি আমাদের বাড়ি ঘরের ক্ষারীয় জলে। কিংবা যে কোনো স্বচ্ছ জলজ স্থানে ঝিনুক চাষ করে মুক্তো উৎপাদন সম্ভব। পুকুরে কিংবা বড় জলের ট্যাংক অথবা চৌবাচ্চায় ঝিনুক চাষ করা যায়। বাড়ি ঘরে ঝিনুক চাষ এবং তাতে মুক্তো উৎপাদনের জন্যে বেশ কিছু নিয়মাবলী মানতে হয়। সেই মোতাবেক করলেই বছরে দুবার অর্থাৎ ৬ মাসে একবার পরিপক্ক মুক্তো পাওয়া যায় যা সাথে সাথে বাজারজাত করে দারুন আর্থিক লাভ করতে পারেন চাষিরা।
কিভাবে করবেন মুক্তো চাষ?
পুকুরে মুক্তো চাষ করার ক্ষেত্রে প্রথমেই বাজার থেকে কিংবা নদী থেকে স্বচ্ছ এবং ভালো গুনমানের ঝিনুক বাছাই করে আনতে হবে। এরপর এই ঝিনুক গুলোর মধ্যে মুক্তো চাষের জন্যে একটি অপারেশান করতে হয়। যাতে ঝিনুকের ভেতরে বিভিন্ন আকৃতির নিউক্লিয়াস অপারেশন করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এই নিউক্লিয়াস গুলি বিভিন্ন আকার আকৃতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়ে থাকে। যাতে করে যে মুক্তো গুলো জন্মাবে সেগুলিও সেই আকার আকৃতি অনুযায়ীই গঠিত হবে।এতে করে উমেশ বাবু স্বামী বিবেকানন্দ, যীশু খ্রিষ্ট, রাম ঠাকুর ইত্যাদি নানা আকার আকৃতির মুক্তোর চাষ করছেন। নিউক্লিয়াস গুলি ভেতরে প্রবেশ করানোর পর ঝিনুক গুলিকে শক্ত সুতো দিয়ে বেঁধে তার সাথে একটা প্ল্যাস্টিকের বোতল টাঙ্গিয়ে পুকুর কিংবা ট্যাঙ্কের জলের ভেতরে রেখে দেওয়া হয়। মাঝে মধ্যে এগুলিকে পর্যবেক্ষণ অবশ্যই করা উচিৎ। এরপর প্রায় ৬ মাস পর পোক্ত হয়ে উঠে সেই মুক্তো গুলো। তখন এগুলোকে ঝিনুক থেকে বেড় করে বিভিন্ন স্বর্ণকার কিংবা মুক্তোর দোকানে বিক্রি করার জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়।
কেন মুক্তো চাষে আয়ের আশা সর্বাধিক ?
মুক্তো চাষ করার ক্ষেত্রে আর্থিক পুঁজি খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া উৎপাদিত মুক্তো বাজার জাত করার পর খরচার চাইতে লাভ দ্বিগুণ সুদে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অধিক। এতে কোনো বাড়তি পরিশ্রম নেই। দিন রাত মাঠে পড়ে কাজ করার ও প্রয়োজনীয়তা নেই। চুরি হয়ে যাবার চিন্তা নেই। কারণ মেশিন ব্যতিরেকে এই ঝিনুক থেকে মুক্তো তোলা অসম্ভব। তাই চুরি করলেও চোরের তেমন কিছু লাভ হবে না। সার্বিক অর্থে এই মুক্তো চাষে দারুন সাফল্যের গ্যারান্টি নিশ্চিত।
উমেশ চন্দ্র বাবু প্রথমে ইউটিউব দেখে এই চাষের প্রতি আকর্ষিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি আরও ভালো ভাবে মুক্তো চাষের বিষয়ে জানতে কলকাতা গিয়ে মুক্তো চাষের বিশেষ কোর্স কমপ্লিট করেন। এরপর নিজের বাড়িতে পুকুরে এই চাষ শুরু করেন।
বর্তমানে উনার কাছ থেকে তালিম নিয়ে আরও স্থানীয় বেশ কয়েকজন এই মুক্তো চাষে এগিয়ে এসেছেন। উনার নিজের একটি কোচিং রয়েছে। যেখানে উনি বর্তমানে বহু সম্ভাবনাময় যুবকদের কে মুক্তো চাষের বিষয়ে শিক্ষা দান করে চলেছেন।
উনি বলেন, বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে সুশিক্ষিত হয়েও সরকারি চাকরি পাওয়া টা বিশাল কঠিন ব্যাপার। তাই উঠতি বয়সের শিক্ষিত যুবক যুবতীরা বিভিন্ন ছোট বড় ব্যবসা বানিয় কিংবা কৃষির দিকে মনোনিবেশ করছেন। উনার প্রয়াস এটুকুই যেন উনার মতোই মুক্তো চাষে আগ্রহী হয়ে উঠে রাজ্যের আরও শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীরা। যাতে করে একদিকে যেমন বেকারত্বের সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে তেমনি রাজ্যের বুকে ছড়িয়ে পড়বে মুক্তো চাষের অতিবিরল এই কৃষি পদ্ধতি।