Blood deficiency in Tripura
লোকসভার ভোট নিয়ে ব্যস্ততা রয়েছে বর্তমান শাসক দলের। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের মতো ব্যস্ততা তৈরি করে নিয়েছে ভোটের বাজারে। এক কথায় লোকসভা নির্বাচনী বাজারে ব্যস্ত রয়েছে সবকয়টি রাজনৈতিক দল।রাজ্যে ২ আসনে দুই দফায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার অন্তত তিন মাস আগে থেকে ভোটের প্রস্তুতি পুরোমাত্রায় শুরু হয়ে গিয়েছিল। যার প্রভাব সমাজের সব ক্ষেত্রেই অল্প বিস্তর পড়েছে। প্রশাসনিক কাজকর্ম থেকে স্বাভাবিক রুটিন ওয়ার্ক প্রায় সর্বত্রই নিজস্ব ছন্দে খানিকটা হলেও স্থবিরতা নেমে এসেছে দেশের অষ্টাদশতম লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে । চার জুন না পেরুলে এই স্থবিরতা সম্পূর্ণভাবে কাটবে না। কিন্তু দেশের সর্ববৃহৎ ভোট উৎসবের কারণে সবচেয়ে বড়সড় প্রভাব পড়েছে হাসপাতালগুলোর ব্লাড ব্যাঙ্কে।বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, তাদের শাখা সংগঠন, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংস্থা- এরাই মূলত সারা বছর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি স্বেচ্ছা রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে থাকে। এক্ষেত্রে সিপিআইএমের শাখা সংগঠন গুলো সবথেকে বেশি এগিয়ে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে সিপিআইএমের যুব সংগঠন বা অন্যান্য শাখার সংগঠনগুলোর তরফ থেকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয়ে থাকে। কিন্তু ভোটের ডামাডোলে দলের তরফ থেকে রক্তদান শিবিরের আয়োজন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। রাজ্যের ব্লাড ব্যাঙ্কগুলোতে সংরক্ষিত রক্তের একটা বড় অংশই আসতো বামেদের আয়োজিত এই রক্তদান শিবির থেকে।কিন্তু ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই রাজনৈতিক দলগুলো সহ অন্যান্য সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো ভোটের ডামাডোলের কারণ গত প্রায় চার পাঁচ মাস ধরে তেমন কোনও বড় মাত্রায় শিবিরের আয়োজন করতে না পারায় রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে রক্ত সংকট তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে।এমনিতে গরমের মরশুমে রক্তের সংকট খানিকটা বেড়ে যায়।কারণ গরমের সময় সাধারণ অবস্থাতেই রক্তদান শিবির কম হয় এবং যাও কিছুটা হয়, তাতে শিবিরে রক্তদাতার সংখ্যাটাও কমে যায়।এর সঙ্গে এইবার ভোটের কারণে রাজনৈতিক দলগুলো রক্তদান শিবির প্রায় পুরোটাই বন্ধ হয়ে গেছে।এই অবস্থার কারণে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেটের আকাল। প্রতিদিনই রাজ্যের প্রধান হাসপাতালগুলোতে রক্তের হাহাকার তীব্রতর হচ্ছে। পরিস্থিতি নাকি এতটাই উদ্বেগের, রোগীর আত্মীয়পরিজনদের রক্ত জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিদিন।প্রায়শই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে রক্তের জন্য রোগীর পরিজনরা দীর্ঘ লাইন দিচ্ছেন।স্বাভাবিক সময়েই হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত রোগীর জন্য জুটে না। কারণ বলা হয়, রোগীর নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত না পাওয়া গেলে রোগীর কোনও আত্মীয় বা ডোনারকে দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করলে, তবেই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত দেওয়া হয় রাজ্যের ব্লাড ব্যাংক গুলিতে এটাই নিয়ম। ফলে বর্তমান সংকটের মুহূর্তে রোগীর আত্মীয়স্বজনকে রক্ত জোগাড়ের জন্য রক্তদাতা সংগ্রহ করতে কতটা দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। সেটা সম্ভব হলে তবেই মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে।রক্ত সংকটে ফিরে যেতে হচ্ছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদেরও।প্রসূতি এবং দূর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীদের পাশাপাশি জরুরি অস্ত্রোপাচারে প্রয়োজনীয় যে সমস্ত রোগীদের রক্তের দরকার, তাদের অসহায়, বিপন্নতার কোনও ভাষা নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, গরমের মরশুমে রক্তের জোগানে ঘাটতি নতুন কোন বিষয় নয়। সেই সঙ্গে লোকসভা ভোটের জন্য সমস্যা আরও তীব্র হবে এটা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরে জানা ছিল।কোভিডের সময়েও রক্ত সংকটের কারণে
রক্তের রিকুইজিশন স্লিপ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতাও জানে এই রাজ্যের মানুষ।তাহলে ভোট ও গরমের উত্তাপে রক্তের আকাল যেন না হয় সেটা
আগে থেকেই কেন নিশ্চিন্ত করা গেল না?একটা কথা এক্ষেত্রে পরিষ্কার বলে রাখা ভালো অতীত অভিজ্ঞতা থেকে যদি আমরা আগাম শিক্ষা নিতে না পারি, নিজেদের তৈরি করে রাখতে না পারি তাহলে এর দায় কে বহন করবে?স্বাস্থ্য দপ্তর কিংবা ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তারা রক্ত সংকটের কথা ঝেড়ে কেশে স্বীকার হয়তো করতে চাইবেন না।কিন্তু তাই বলে তো মানুষের হয়রানি, রক্তসংকট, দুর্ভোগ এগুলো তো অসত্য হয়ে যাচ্ছে না।যে কোনও কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য দুই ধরনের প্রস্তুতি থাকে।কেউ পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়াশোনা করেন।কেউ পরীক্ষার অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।কেন এক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদ্ধতি গ্রহণ করল না স্বাস্থ্য দপ্তর?একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় পরিকল্পনার অভাবেই রাজ্যে এই রক্ত সংকটের জন্য দায়ি। তবুও বিপন্ন এই সময়ে দোষারোপ ছেড়ে স্বাস্থ্য দপ্তর, সরকার ও প্রশাসন এই মুহূর্তে ব্লাড ব্যাঙ্কের পুরানো নথি ঘেঁটে রক্তদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে ছোট আকারে নিয়মিত কিছু রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার উদ্যোগ নিক।আর এই উদ্যোগে সবাই পাশেই থাকবে। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহার আহ্বানে বেশ কিছু রক্তদান শিবিরের আয়োজন হচ্ছে। রাজ্যে থাকলে মুখ্যমন্ত্রীও সেই রক্তদান শিবির গুলোতে অংশগ্রহণ করছেন। বৃহস্পতিবার এক রক্তদান শিবিরে অংশগ্রহণ করে মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা স্বীকার করেছেন, সরকার অনুমোদিত ১২ ব্লাড ব্যাংক এবং দুটি বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকে রক্তস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন কমে গেছে বলেই এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে সরকার এই ব্যাপারে সচেতন খুব শীঘ্রই দলীয়ভাবে কিছু রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হবে। এক্ষেত্রে তিনি সবাইকে রক্তদানের মত মহৎ কর্মে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। অপরদিকে শুক্রবারেও একটি বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত এক রক্তদান শিবিরে অংশগ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে রক্ত দাদাদের উৎসাহ দেবার পাশাপাশি তিনি এই ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী খুব শীঘ্রই দলীয়ভাবে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হবে সে বিষয়টি থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একাধিক রক্তদান শিবিরের আয়োজন ও অপ্রয়োজন মনে করছেন জিবি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের আধিকারিকরা। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, চাহিদার সাথে রক্তের যোগানের আকাশ পাতাল ফারাক দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে দ্রুত কিছু ছোট আকারের হলেও রক্তদান শিবিরের আয়োজন অতিব জরুরী বলেই মনে করছেন ব্লাড ব্যাংকের অধিকর্তারা।