Amra Bangali press meet
শিবনগরস্থিত আমরা বাঙালী রাজ্য কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয় শুক্রবার। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আমরা বাঙালী সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল, প্রচার সচিব দুলাল ঘোষ সহ অন্যান্য দলীয় নেতৃত্বরা।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল বলেন, অসমে এনআরসি চালু হওয়ার ফলে প্রায় ঊনিশ লক্ষের উপর মানুষ বিদেশী চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে তেরো লক্ষের উপর হিন্দু বাঙালী।এই এনআরসি তালিকায় যারা রয়েছেন, তাদের বৈধ কাগজ পত্র থাকা সত্ত্বেও এদেরকে বিদেশী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনকি ভারতের রাষ্ট্রপতি ও এনআরসির ফলে বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। অথচ যারা বলছেন ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরর মধ্যে বসবাস কারী হিন্দু নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেবে, সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত একজন নাগরিককেও নাগরিকত্ব দেওয়া হয় নি। বরং অসমের মুখ্যমন্ত্রী কিছু দিন আগে বহি:রাজ্যে নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে বলেন অসমে এক কোটির উপর বিদেশী লোক আছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী সরকার এই নাগরিকদের চিহ্নিত করে বৈদেশিক আইন অনুসারে যে কোন সময় তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহন করতে পারে। এখানে গৌরাঙ্গ বাবুর দাবি, এনআরসি এবং সিএএ’র মাধ্যমে বাঙালীদের প্রতি ভয় ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। সরকারি সব সুযোগ সুবিধা শুধু ভূমিপুত্র অসমীয়ারদের দেওয়ার জন্যই এই ধরনের পরিকল্পনা।তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বেলুচিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আগত বহু নাগরিক নাগরিকত্ব আইন মেনে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে ভারতে । এরমধ্যে চৌদ্দ জন নাগরিকত্ব পেয়েছে। আর বাকিদের ভাগ্যে নাগরিকত্ব জুটবে কি না সরকার কোন কিছুই স্পষ্ট করেনি। তবে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য সরকার যে সকল নিয়ম কানুন বেঁধে দিয়েছে, তাতে একটি জিনিস পরিস্কার হয়ে গেছে এনআরসি বদলে সিএএ’র মাধ্যমে খুব কায়দা করে এই দেশে বসবাসকারী নাগরিকদের মাধ্যমেই সরকার স্বীকারোক্তি আদায় করে নিচ্ছে যে ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বিদেশী নাগরিক। আর যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ নাগরিকত্ব না পাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সমস্ত রকম সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যে সকল কাগজ পত্র লাগবে তা হলো, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বেলুচিস্তান এই সকল দেশের সরকারের ইস্যু করা পাসপোর্ট। ওই সব দেশের সরকার কর্তৃক জারি করা জন্ম সার্টিফিকেট,ওই সব দেশের বসবাসের পরিচয় পত্র। ওই সব দেশের জারি করা স্কুল সার্টিফিকেট। ওই দেশের জমি বা বাড়ির দলিল পত্র। যে কোন নথি, যা প্রমাণ করে আবেদন কারীর বাবা মা ঠাকুর দা ওই সমস্ত দেশের নাগরিক ছিলেন। এর থেকে একটি বিষয় পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে যারা দেশ ভাগের ফলে নিজের প্রাণ বাঁচাতে এই দেশে এসেছেন তারা এই সমস্ত কাগজপত্র না দেখাতে পারলে এখানে তারা নাগরিকত্ব পাবে না। এক্ষেত্রে গৌরাঙ্গবাবুর দাবি সরকার যদি সত্যিই নাগরিকত্ব দিতে চায় তাহলে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুসারে সেই নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট দেওয়া হোক। তাহলে কারোর আপত্তি থাকবে না। এক্ষেত্রে জন্ম সূত্রে ভারতীয় হতে হবে। মা বাবা ভারতের নাগরিক হলে, বিবাহ আইন অনুসারে বা এই দেশে ৫ বছরের অধিক বসবাস করার প্রমাণ দেখিয়ে এরা ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে পারবে। আর এজন্যেই, আমরা বাঙালী দল এনআরসি এবং সিএএ’র বিরোধিতা করছে। আমরা বাঙালী দল চায় দেশভাগের বলি প্রতিটি বাঙালীকে স্বাধীনতার জাতীয় প্রতিশ্রুতি অনুসারে নাগরিকত্ব প্রদান করে বসবাসের ও সরকারি সুযোগ সুবিধা লাভের ব্যাবস্থা করে দেওয়া। আর তা না হলে আমরা বাঙালির সিএএর বিরোধিতা জারি থাকবে বলে জানালেন গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল।