খবরে প্রতিবাদ

খবরে প্রতিবাদ

Saturday, 26 July 2025 - 10:34 PM
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫ - ১০:৩৪ অপরাহ্ণ

Tripura Bengali People History : ডেভিড মোড়াসিং কে হুঁশিয়ারি দিয়ে ত্রিপুরার বাঙালি সমাজের ইতিহাস তুলে ধরলেন গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল

Tripura Bengali People History
1 minute read

Tripura Bengali People History : ত্রিপুরা রাজ্যে সম্প্রতি উত্তাপ ছড়িয়েছে একটি বিতর্ককে ঘিরে—বাঙালিদের “অনুপ্রবেশকারী” আখ্যা এবং শহর দখলের অভিযোগ। এই প্রেক্ষিতে বাঙালি সমাজের ইতিহাস, ভূমিকা ও অবদান খোলসা করে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশিষ্ট সমাজ বিশ্লেষক গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল।

এদিন গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল বলেন, ত্রিপুরার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। ১৪৬৬ খ্রিস্টাব্দে পাওয়া রত্ন ফা’র মুদ্রা থেকেই জানা যায় উপজাতি রাজাদের শাসন শুরু পঞ্চদশ শতকে। তার আগের ইতিহাস ঘাঁটলে, শ্রীভূম, হরিকেল বা বঙ্গ রাজ্য নামে পরিচিত ছিল এই ভূখণ্ড। ড. নলীন রঞ্জন রায়চৌধুরী, রমেশ চন্দ্র মজুমদারসহ বহু ইতিহাসবিদ একমত—ত্রিপুরা ছিল বাংলার অধীন এবং বাঙালি সভ্যতা ও সংস্কৃতির ধারক ছিল বহু আগেই।

ত্রিপুরার উপজাতি গোষ্ঠীর আগমন ঘটে অনেক পরে, আরাকান অঞ্চল থেকে দুর্ভিক্ষপীড়িত হয়ে মোচাং ফার নেতৃত্বে এরা ত্রিপুরায় প্রবেশ করে এবং রাজশক্তির সঙ্গে সন্ধি করে স্থায়ী হয়। ত্রিপুরার ইতিহাসে জনসংখ্যা সংক্রান্ত সবচেয়ে পুরনো ও গুরুত্বপূর্ণ নথি হলো ১৯৩১ সালের জনগণনা।

মোট জনসংখ্যা: ৩,৮২,৪৫০ , বাঙালি: ১,৯৮,৩৩৩ (প্রায় ৫২%), উপজাতি: ১,৮৪,১৩৪ (প্রায় ৪৮%)- ঙালিরা তখন থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।
১৯৫১ সালের প্রথম অল ইন্ডিয়া জনগণনায়: মোট জনসংখ্যা: ৬,৩৯,০২৯, বাঙালি: ৪,৪৬,৭৩৬, উপজাতি: ১,৯২,২৯৩ । ৬০ বছরের ব্যবধানে ২০১১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার: – বাঙালি: ৪৬০.৮৭%, উপজাতি: ৫০৭.৫৬%।

এখানেই প্রশ্ন: যদি বাঙালিরাই “অনুপ্রবেশকারী” হতো, তাহলে এত বড় সংখ্যায় সরকারি নথিতে থেকে যেত কীভাবে?

১৯৫১ সালের পর লোকগণনায় বাঙালিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪.৪৬ লাখ এবং উপজাতি ১.৯২ লাখ। পরবর্তী ছয় দশকে দুই সম্প্রদায়েরই বৃদ্ধি ঘটে: বাঙালিদের বৃদ্ধির হার ৪৬০.৮৭% আর উপজাতিদের ৫০৭.৫৬%।
গৌরাঙ্গ বাবুর প্রশ্ন—তবে কেন আজ বাঙালিদের দখলদার আখ্যা দেওয়া হচ্ছে?
বাঙালিরা ত্রিপুরার সমতল অঞ্চলে বসবাস করত, শহর গড়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অগ্রণী ছিল। উপজাতি সম্প্রদায় বাঙালিদের সংস্পর্শে এসে বহু বিষয়ে উন্নতি করেছে—চাকরি, শিক্ষা, ব্যবসা। তাতে বাঙালিরা আনন্দিত । কিন্তু এ কথা মেনে নেওয়ার পরিবর্তে, উল্টো বাঙালিদের অপরাধী বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেই তার অভিযোগ।

৮০র দশকের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার স্মৃতি এখনও তাজা। গৌরাঙ্গ পাল আশঙ্কা করছেন—আবার সেই পথে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। রাজনৈতিক স্বার্থে বিভাজনের বীজ বোনা হচ্ছে,।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে উপজাতিদের উপস্থিতি বাঙালিদের চেয়ে বেশি। Backlog কোটা ব্যবস্থায় বহু উপজাতি চাকরি পেয়েছেন । আজ উন্নয়নের যে জায়গায় উপজাতি সমাজ পৌঁছেছে, তাতে বাঙালিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

ঊনকোটি, বক্সনগর, মূর্তি ভাস্কর্য ও বৌদ্ধ-হিন্দু স্থাপত্য বাংলার সাংস্কৃতিক ছাপ বহন করে। এগুলি বাঙালিদেরই অবদান। রাজমালায় যে ১৭৮ জন রাজা আছে, তার মধ্যে কেবল ১৪৫ জন থেকে বাস্তব ইতিহাস শুরু। পূর্ববর্তী অংশ অনেকটাই কিংবদন্তি ও পুরাণ-ভিত্তিক।
তিনি বলেন, “আমরা কাউকে ছোট করতে চাই না, বরং সকলের মঙ্গল চাই। উপজাতিরা আরও উন্নতি করুক, বাঙালিদের পাশে সমানতালে এগিয়ে যাক। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি ও উস্কানি বন্ধ হোক।”

ত্রিপুরার ইতিহাস যদি খতিয়ে দেখা যায়, তাহলে একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ, রাজবংশীয় তালিকা এবং ইতিহাসবিদদের গ্রন্থ অনুযায়ী বোঝা যায়—ত্রিপুরার সভ্যতার সূচনা মুলত বাঙালি সংস্কৃতি ও রাজশক্তির মাধ্যমেই।

রাজমালার তথ্য অনুযায়ী, প্রথম উপজাতি রাজা রত্ন ফা’র শাসন শুরু হয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে। তার ব্যবহৃত মুদ্রা পাওয়া যায় ১৪৬৬ খ্রিস্টাব্দে। অথচ তার আগেই ত্রিপুরা ছিল বঙ্গ-অধীন শ্রীভূম, হরিকেল বা সমতল রাজ্যের অন্তর্গত। ড. নলীনরঞ্জন রায়চৌধুরী তার গ্রন্থ “মানিক্য শাসনধীন ত্রিপুরা” তে বিশদে ব্যাখ্যা করেছেন এই ইতিহাস। রাজা ভুবচন্দ্র, ধর্মাদিত্য, দেবলোক, সমাচার প্রমুখ ছিলেন এই অঞ্চলের বাঙালি রাজা। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার, প্রভাতচন্দ্র সরকার, এবং বি.কে. বড়ুয়ার মতো নামজাদা গবেষকরা একমত: উপজাতি রাজবংশগুলির আগমন মূলত আরাকান প্রদেশের দিক থেকে দুর্ভিক্ষপীড়িত হয়ে, মোচাং ফা’র নেতৃত্বে।

এখানে স্পষ্ট, মঙ্গোলয়েড উপজাতিদের আগমন বহিরাগত হিসেবেই এবং পরবর্তীতে তারা স্থানীয় রাজবংশের সঙ্গে সন্ধির মাধ্যমে এখানে স্থায়ী হয়। ত্রিপুরার যত শহর রয়েছে—উদয়পুর, আগরতলা, সাবরুম, বিলোনিয়া, খোয়াই, ধর্মনগর, সোনামুড়া, কমলপুর—এগুলো মূলত সমতল অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে ঐতিহাসিকভাবে বাঙালিরা বসবাস করত।

ব্যবসা, চাকরি, প্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা—সবখানেই বাঙালিরাই প্রথম অগ্রসর হয়। উপজাতি সম্প্রদায় মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে থেকেছে, যেখানে শহুরে বিকাশ ছিল সীমিত। আজ যে উপজাতি সমাজ উন্নত হয়েছে—তা বাঙালিদের সংস্পর্শেই শিক্ষা, ব্যবসা, চাকরি ও সামাজিক চর্চায় অংশগ্রহণের ফল।

গৌরাঙ্গ বাবুর বক্তব্য অনুযায়ী, আজ যদি ত্রিপুরার যেকোনও সরকারি দপ্তরে যাওয়া যায়, দেখা যাবে উপজাতিদের সংখ্যা চাকরিতে বাঙালিদের তুলনায় অনেক বেশি। Backlog কোটা ও ST Reservation ব্যবস্থার কারণে উপজাতিদের উন্নয়নের পথ তৈরি হয়েছে, যা সাংবিধানিক অধিকার। এতে বাঙালিরা বাধা দেয়নি। বরং বরাবর সহযোগিতা করেছে।

তবু, কেন এই অভিযোগ—বাঙালিরা চাকরি দখল করে নিচ্ছে?
গৌরাঙ্গ পাল আশঙ্কা করছেন, একটি রাজনৈতিক মহল ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে , যাতে সামাজিক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। ত্রিপুরার উনকোটি, বক্সনগর, ঋষ্যমুখ পাহাড়, বৌদ্ধ মূর্তি, শিবলিঙ্গ—এসব কোনো উপজাতি সংস্কৃতির নয়। এ সবই বাংলার হিন্দু ও বৌদ্ধ শিল্পের নিদর্শন।

ত্রিপুরা রাজমালার ১৭৮ রাজাদের মধ্যে কেবল ১৪৫ জনের তথ্যই ঐতিহাসিকভাবে সত্য—বাকিরা কিংবদন্তি মাত্র। বাঙালির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অবদান শুধু ভাষার মাধ্যমে নয়, ভাস্কর্য, স্থাপত্য ও সাহিত্যেও গভীরভাবে রচিত।
গৌরাঙ্গ পাল এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলেন: “বাঙালিদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে কেন?” বাঙালিরা ভারতেই জন্মেছে, এই দেশের মাটিতে বেড়ে উঠেছে। মঙ্গোলয়েড উপজাতিরা এসেছে মঙ্গোলিয়া থেকে, আর্যরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে—তাদের তো কেউ ‘বিদেশি’ বলে না। তাহলে ভারতীয় ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া বাঙালিদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলা হবে কেন?

ত্রিপুরার প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “গায়ের জোরে ইতিহাস বদলায় না। ত্রিপুরা সবার। আমরা সকল সম্প্রদায় মিলে এগিয়ে যেতে চাই, হিংসা নয়, ঐক্যই হোক আমাদের মূলমন্ত্র।”তিনি বলেন ত্রিপুরা সবার। বাঙালিদেরও, উপজাতিদেরও।

গৌরাঙ্গ পাল স্পষ্ট বলেন:
“আমরা চাই উপজাতিরা আরও উন্নত হোক, যেন আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ত্রিপুরার উন্নয়নে অংশ নিতে পারে। কিন্তু ইতিহাস বিকৃতি, বিভাজনমূলক উ

For All Latest Updates

ভিডিও