50 years old trees cut down in Tripura
৫০ কিংবা ৭০ বছর পুরনো বৃক্ষ, যারা দীর্ঘ সময় যাবত মাথার উপর এক একটা প্রাকৃতিক ছাউনির মতো করে বেষ্টিত ছিল সেই বৃক্ষ গুলোর সাথে মানুষের বহু বছরের আবেগ জড়িয়ে আছে, আর থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ত্রিপুরা ক্ষুদ্র রাজ্য হলেও এখানকার প্রাকৃতিক উপাদান সমূহ রাজ্যকে এর নিজস্বতা প্রদান করে। তবে সময়ের চাহিদা বলছে অন্য কথা।
মানুষ নিজের প্রয়োজন মেটাতে আজীবন প্রকৃতির উপরেই নির্ভরশীল। তবে প্রকৃতির উপর এই লাগাম হীন নির্ভর শীলতা যে প্রকৃতিকেই কতটা ধ্বংসের পথে ধাবিত করেছে সেটা বুঝেও বুঝতে চাইছে না মানুষ। আর তাঁর পরিণতি আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অস্বাভাবিক গরম ইত্যাদি।
কথা হচ্ছিলো ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে কয়েক কিমি দূরত্বে অবস্থিত জিরানিয়া এলাকার সন্নিকটে জাতীয় সড়কের দুপাশে বড় আকারের বৃক্ষ গুলিকে নিয়ে। ইতিমধ্যেই শোনা গেছে যে সরকারি নির্দেশে এই বৃক্ষ গুলিকে কেটে ফেলা হচ্ছে। কি উদ্দেশ্যে এতো বছর পুরনো এই বৃক্ষ গুলিকে কাঁটা হচ্ছে ?
সেই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে জানা গেল, আসাম আগরতলা ৪৪ নং জাতীয় সড়ক এর বর্ধিত করণের জন্যেই এই সরকারি উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ মূলে এই রাস্তা প্রশস্ত করা হবে। যাতে ডবল লেনের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এই আসাম আগরতলা জাতীয় সড়ক নিঃসন্দেহে ত্রিপুরার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। রাজ্যের সাথে গোটা দেশের সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপনে এই রাস্তা অসীম ভূমিকা পালন করে। আর এই পথ ধরেই নিত্যদিন রাজ্যে বড় বড় লরি যোগে পণ্য সামগ্রীর আমদানি রপ্তানি ঘটে। সেই সুত্রে এই রাস্তার মেরামতি কিংবা রাস্তার বর্ধিত করণের গুরুত্ব অপরিসীম। স্থানীয় দের মতে বর্তমান সড়ক পথ টি প্রস্থের দিক থেকে সরু হবার কারণে প্রায়শই যান দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই রাস্তাটি প্রস্থে বাড়ানো প্রয়োজন।
বাম আমলেও এধরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কার্যত তা করা হয়ে উঠেনি। বর্তমান বিজেপি সরকার এই পরিকল্পনা হাতে নিয়ে পুনরায় রাস্তাটিকে নির্মাণ করার কাজ শুরু করতে চলেছে, এমনটাই দাবী স্থানীয়দের।
এদিকে রাস্তা নির্মাণের কাজের দায়ভার সোপে দেওয়া হয়েছে হরিয়ানার একটি রোড এন্ড কন্সট্রাকশান কোম্পানি কে যার নাম “বুদ্ধ গ্রুপ অফ কন্সট্রাকশান এন্ড প্রোপারটিজ কোম্পানি”। বিগত প্রায় মাস খানেক যাবত বন কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে এই জাতীয় সড়ক পথ এর দুপাশের দীর্ঘ পুরনো বৃহৎ আকারের বৃক্ষ গুলিকে গোঁড়া থেকে কেটে ফেলা হচ্ছে। যাতে করে সামাজিক মাধ্যমে ব্যপক প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ জন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়ে প্রকৃতির এক অপূরণীয় ক্ষতি করে দিচ্ছেন না তো সরকার মহাজন ?
বলা হচ্ছে রাস্তা নির্মিত হয়ে গেলে পুনরায় গাছ লাগানো হবে। কিন্তু সকলেই জানেন , ৫০ কিংবা ৭০ বছর পুরাতন বৃক্ষের বিকল্প হিসেবে কিছু পাইন কিংবা সুপারি গাছ লাগালে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তাছাড়া সৌন্দর্যের নাম করে এর চাইতে বেশি কোনো গাছ লাগানো হবে বলেও ধরা যায়না। কেননা এর প্রকৃত উদাহরণ হিসেবে রাজ্যের অন্যান্য বৃহৎ ডবল লেনের রাস্তা গুলিকে ধরেই নেওয়া যায়। বর্তমানে গোটা রাজ্য জুড়ে জাতীয় সড়কের দু পাশের এই বৃক্ষ গুলোর করুন পরিণতির চিত্র নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিতে শুরু করেছেন মানুষ। যদিও সরকার এর উপর কারোর কোনো জোর চলেনা। তবে একটা সময় আসবে যখন এই গাছ গুলোর অভাব অনুভব করবে মানুষ। আর তখন গাছ রক্ষার্থে একত্রিত হয়ে আবারো সামিল হবেন তারা “চিপকো আন্দোলনে” এমনটাই ধারণা সকল অভিজ্ঞ মহলের।