Tripura to get petrol by tonight

অবশেষে স্বস্তির বার্তা পৌছেছে ত্রিপুরায়। অসমে পাহাড় লাইনে রেল চলাচল নির্বিঘ্নে শুরু হয়েছে। আজ বেলা ১০টা ৪১ মিনিটে পেট্রোপণ্য বোঝাই ট্রেন অসমের ডিমা হাসাও জেলার জাটিঙ্গা লামপুর – নিউ হারাঙ্গাজাও অংশ অতিক্রম করেছে। শনিবার রাতেই পেট্রোপণ্যবাহী ট্রেন ঢুকে যাবে রাজ্যে।
টানা ৭ দিন ধরে পেট্রোল ডিজেলের সঙ্কট চলছে ত্রিপুরায়। প্রবল বৃষ্টিতে অসমের পাহাড়ে জায়গায় জায়গায় ধস নামায় জাতীয় সড়কে যান চলাচল গুরুতরভাবে ব্যাহত। রেল লাইনে এমনিতেই মেরামতি চলছিল। দ্রুতগতিতে রেললাইন সারাইয়ের পর শনিবার থেকে পুনরায় পেট্রোপণ্য বোঝাই রেল চলাচল শুরু হয়েছে। পেট্রোপণ্য বোঝায় রেল সুরক্ষিতভাবে অতিক্রম করল জাটিঙ্গা লামপুর – নিউ হারাঙ্গাজাও, ধীরে ধরে ধর্মনগরের দিকে এগিয়ে আসছে। পণ্যবাহী ট্রেন চালু হওয়ায় অবশেষে স্বস্তির বার্তা পৌছেছে ত্রিপুরায়। অসমে পাহাড় লাইনে রেল চলাচল নির্বিঘ্নে শুরু হয়েছে। শনিবার বেলা ১০টা ৪১ মিনিটে পেট্রোপণ্য বোঝাই ট্রেন অসমের ডিমা হাসাও জেলার জাটিঙ্গা লামপুর – নিউ হারাঙ্গাজাও অংশ অতিক্রম করেছে। ভারি বর্ষণে ওই রুটে রেল চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, ত্রিপুরা, অসমের বরাক উপত্যকায় রেল সংযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে জানিয়েছেন, পেট্রোপণ্য বোঝাই ৪৯টি ওয়াগণ নিয়ে ট্রেন অসমের ডিমা হাসাও জেলার জাটিঙ্গা লামপুর – নিউ হারাঙ্গাজাও অংশ অতিক্রম করেছে এবং ধর্মনগরের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় লাইনে রেললাইন ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে, প্রভাব পড়েছে যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে। মূলত, গত ২৬ এপ্রিল লামডিং-বদরপুর হিল সেকশনে হারাঙ্গাজাও ও জাটিঙ্গা লামপুর স্টেশনের মধ্যবর্তী ১১০/৭ কিলোমিটার অংশে একটি পণ্যবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনের চাকা লাইনচ্যুত হওয়ার জেরে পাহাড়ে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। জানা গেছে, হারাঙ্গাজাও-জাটিঙ্গা লামপুর অংশ দিয়ে একটি চিনি বোঝাই মালবাহী ট্রেন পার হওয়ার পর ফের রেলওয়ে ট্র্যাক মাটির নিচে ঢুকে যায়। গত কিছুদিন ধরে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলপথ মেরামতির কাজ চালিয়ে গেলেও কয়েকটি যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করে গুরুত্বপূর্ণ যাত্রীবাহী ট্রেন চালাচ্ছে এএফ রেলওয়ে। তবে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রেখেছিল কর্তপক্ষ। যার দরুন বরাক উপত্যকা সহ পার্শ্ববর্তী ত্রিপুরা, মণিপুর এবং মিজোরামে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।
রেল লাইন মেরামতি নিয়ে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের লামডিং ডিভিশনের ডিআরএম প্রেমরঞ্জন কুমার জানিয়েছিলেন, জাটিঙ্গা লামপুর অংশে মাটি অত্যন্ত দুর্বল ও মাটির বহন ক্ষমতা কম। বেশি ভারি ট্রেন যতায়াতে মাটির বহন ক্ষমতা আরও কমে গিয়ে লাইনের নীচের মাটি ডেবে যায়। তাছাড়া, রেল লাইন মেরামতি করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। কেননা ধস-বিধ্বস্ত ওই এলাকায় গাড়ির রাস্তা নেই। তাই কাজের জন্য সামগ্রী আনতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী পাথর বোল্ডার আনতে এই রেলপথই একমাত্র নির্ভরশীল।
এদিকে, শুক্রবার বিকালে লামডিং থেকে শালচাপড়ার উদ্দেশ্যে একটি পণ্যবাহী ট্রেন সফলভাবে জাটিঙ্গা-লামপুরের ধস-বিধ্বস্ত এলাকা বিনা বাধায় পার হয়ে যায়। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেল লাইন মেরামতির কাজের দরুন সন্ধ্যা ৬-টা থেকে সকাল ৬-টা পর্যন্ত পাহাড় লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে। যার দরুন দূরপাল্লার ট্রেনগুলি অস্বাভাবিক দেরিতে চলাচল করছে। এর জন্য কয়েকটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সময় পুর্ননির্ধারন করে কয়েকটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল। শনিবার পেট্রোপণ্য বোঝাই ট্রেন সফলভাবে জাটিঙ্গা লামপুর – নিউ হারাঙ্গাজাও অংশ অতিক্রম করেছে এবং ধর্মনগরের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে।
রেললাইন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ত্রিপুরায় পেট্রোপণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গত ১ মে থেকে ত্রিপুরা সরকার পেট্রোল-ডিজেলে রেশনিং চালু করেছে। তাতে, পেট্রোল পাম্পের বাইরে প্রতিদিন যান চালকদের দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সারা ত্রিপুরায় একই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরই সাথে পেট্রোপণ্যের কালোবাজারি সাধারণ মানুষকে ভীষণ সমস্যায় ফেলেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর মানিক সাহা রেল মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অবশেষে আজ ১৯ ওয়াগণ ডিজেল এবং ৩০ ওয়াগণ পেট্রোল মোট ৪৯ ওয়াগণ পেট্রোপণ্য নিয়ে ট্রেন সকাল ১০টা ৪১ মিনিটে অসমের ডিমা হাসাও জেলার জাটিঙ্গা লামপুর – নিউ হারাঙ্গাজাও অংশ অতিক্রম করেছে। এই খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যমে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি লেখেন, গত ২৬ এপ্রিলের পর আজ প্রথম পিওএল রেক অসমের জাটিঙ্গা-হারাঙ্গার মধ্যে ভূমিধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা অতিক্রম করেছে এবং শনিবার রাতেই ত্রিপুরায় পৌঁছবে পেট্রো পণ্যবাহী ট্রেন ৷ এই সমস্যাটি দ্রুত নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান তিনি।পাশাপাশি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সহ যে সমস্ত শ্রমিকেরা খারাপ আবহাওয়ার মধ্যেও রাতদিন নিরলসভাবে কাজ করে অতি দ্রুততার সাথে রেল চলাচল স্বাভাবিক করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। সর্বোপরি, এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ত্রিপুরার আপামর জনগণদের ধন্যবাদ জানান।

Leave A Reply