Priyanka Gnadhi road show in Tripura
হাড় হিম হয়ে গেছে বিজেপির। ত্রিপুরায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর অনুগামীদের ভিড়ই জানান দিচ্ছে রাজ্যের মানুষ কাকে চায়!
বিজেপির বহু বড় বড় দাবী কে নস্যাত করে দিয়ে রাজধানীর বুকে নয়া ইতিহাস গড়লো মানুষ। যেখানে পদ্ম শিবিরের দাবী , বিরোধী দের নাকি রাজ্যের মানুষ মুছেই ফেলেছে সেখানে হাজার হাজার লোকের ভিড়ের চিত্র যেন তাদের এই দাবীতে চুন কালি লেপে দিয়েছে।
মঙ্গলবার ১৬ই এপ্রিল পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী রাজ্যে আসেন কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদিকা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। পশ্চিম আসনে ইন্ডিয়া জোট তথা কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী আশিস কুমার সাহা এবং ৭ রাম নগরের উপনির্বাচনে বাম প্রার্থী রতন দাসের সমর্থনে প্রচারে আসেন স্টার প্রচারক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। দুপুর আনুমানিক ৩.৩০ মিনিটে আগরতলা বিমানবন্দরে অবতারণ করে উনার বিমান। এর পরেই এসকোর্ট নিয়ে চলে আসেন সার্কিট হাউজ স্থিত গভর্নর হাউজের সামনে। সেখান থেকেই রোড শো এর জন্যে তৈরি বিশেষ গাড়ি তে করে সার্কিট হাউজ থেকে পোস্ট অফিস চৌমুহনী কংগ্রেস ভবন পর্যন্ত রোড শো করেন তিনি। উনার সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী, ছিলেন প্রার্থী আশিস কুমার সাহা, রতন দাস, প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র জারিতা লাইটফ্লাং, বিধায়ক গোপাল রায় প্রমুখ।
আঁটো সাটো প্রশাসনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বেষ্টনীর মধ্যে দিয়ে এদিনের রোড শো দারুন ভাবে সম্পন্ন করেন। দুই হাত তুলে সকলকে অভিবাদন জানান প্রিয়াঙ্কা। বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ও জ্ঞাপন করেন রাজ্যবাসী কে। আর এই নজর কাড়া মিছিলে চার চাঁদ লাগিয়ে দিয়েছিলেন রাস্তার ধারে দু চোখ মেলে চেয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষ। সবার নজর ছিল শুধুই প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর দিকে। বহু দিন বাদে নেত্রী কে স্বচক্ষে দেখতে পেয়ে যেন স্বস্তি পেলেন তারা। সকলের চোখে ভাসছিল একটাই ইচ্ছে, “এবার বোধয় ভালো দিন ফিরবে”।
সার্কিট হাউজ থেকে পোস্ট অফিস চৌমুহনী পর্যন্ত পায়ে হেটে হাজার হাজার অনুগামীরা এদিনের রোড শো কে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করেছেন। পদ্ম শিবিরের তাবড় তাবড় নেতা বৃন্দের বড়াই করে বিরোধী দমনের ইচ্ছে কে একেবারে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছেন এদিন ভিড় জমানো মানুষ গুলোই।
এদিকে ১৫ই এপ্রিল কুমারঘাটে গৃহমন্ত্রী অমিত শাহের জনসমাবেশে জন প্রবেশ প্রায় ছিল না বললেই চলে। যে কজন এসেছেন তাদের ও নাকি কিছু ভয় ভীতি আর সামান্য কয়েকটা রঙ্গিন কাগজের প্রলোভন দেখিয়েই সমাবেশে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। আর বাকি অর্ধেক আসন ছিল একেবারে শূন্য। আগামীকাল অর্থাৎ ১৭ই এপ্রিল দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মন্ত্রী আসছেন আস্তাবল ময়দানে সমাবেশ করতে। প্রতিবারের মতোই এবারো মোদী জীর জনসমাবেশে তিল ধরার জায়গা থাকবে না বলেই আশা করা হচ্ছে। তবে আজকে ইন্ডিয়া জোট প্রার্থীর সমর্থনে আয়োজিত বিরোধী শিবিরের রেলি দেখার পর কিছুটা হলেও প্রশ্ন জাগে , এই ভিড় কে টেক্কা দিতে পারবে কি মোদী জীর জনসভা? কেননা এবারের লোকসভা নির্বাচন বিগত নির্বাচন গুলোর মতো সহজ নয়। বহু অভিযোগ , নিরাশা এবং ভোগান্তির বশে মোদী সরকারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে মানুষ। সেক্ষেত্রে এই প্রশ্ন টা উঠবে এটাই স্বাভাবিক।
সময় খানিকটা কম থাকার কারণে কোনো বিশাল জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়নি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে। তাই রোড শো শেষ করেই পোস্ট অফিস চৌমুহনী তে এসে সবার উদ্দেশ্যে কিছু মুল্যবান কথা বলেই আবারো বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রউনা হন তিনি। তবে যে টুকু সময় আজ উনি ত্রিপুরার রাজধানীর মাটিতে ছিলেন , সর্বত্র শুধু উনাকে এক নজর দেখার জন্যেই মানুষ ভিড় জমিয়েছে। নেত্রীর প্রতি কতটা ভালোবাসা উজার করেছে আজ আগরতলা বাসী সেটা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস যোগ্য বলে নাই মনে হতে পারে। তবে শহরের সার্বিক চিত্র ছিল আজ অন্যরকম।
হাওয়া পালটাচ্ছে। ২০১৮ তে “চলো পাল্টাই” শ্লোগান এর ঢেউ যেমন রাজ্যের বুক থেকে বাম সরকার কে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে নতুন এক সরকার গঠন করেছিল , গণতন্ত্র রক্ষার্থে এবার আবারো সেই পরিবর্তনে ঢেউ উঠেছে। ২৫ বছরের বাম সরকার কে যেমন সরানো যায় তেমনি ১০ বছরের মোদী শাসন কে ও শেষ করা যায় এমনটাই দাবী করছেন আম জনগণ। যারা ন্যায়, উন্নয়ন এবং শান্তির পক্ষে তাদের নিঃসন্দেহে মন থেকে ডাক উঠেছে পরিবর্তনের। এবার বাকিটা শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা। ফ্রি এন্ড ফেয়ার নির্বাচন হলে ভারতের নকশা পাল্টে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।