NCERT Syllabus News : ভারতের জাতীয় শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ (এনসিইআরটি) অষ্টম শ্রেণির সমাজবিজ্ঞান পাঠ্যবইয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে আনা পরিবর্তন নিয়ে দেশজুড়ে উত্তাল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন পাঠ্যবইয়ে মুঘল সম্রাট বাবর, আকবর এবং আওরঙ্গজেবকে একদিকে জ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, অন্যদিকে তাদের শাসনামলের সহিংসতা, লুটপাট এবং ধর্মীয় নিপীড়নের দিকটি আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পূর্বের পাঠ্যক্রমে যেখানে সম্রাট আকবরকে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে দেখানো হতো, সেখানে এখন তাকে উপাসনালয় ধ্বংসকারী এবং যুদ্ধবাজ শাসক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। বাবরের কবিতা ও স্থাপত্যের প্রতি অনুরাগের স্বীকৃতি দিলেও, তার দখলদারির নৃশংসতা আরও বেশি করে তুলে ধরা হয়েছে। আওরঙ্গজেবকে উপস্থাপন করা হয়েছে ধর্মীয় দমন-পীড়নের প্রতীক হিসেবে।
এনসিইআরটি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ইতিহাসকে ‘প্রসাধিত’ না করে তার পূর্ণতা উপস্থাপন করাই এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য। তারা বলছে, শিক্ষার্থীদের একটি ‘বাস্তবধর্মী’ ইতিহাস শেখানো দরকার, যা শুধু গৌরব নয়, বর্বরতাও দেখাবে।
তবে সমালোচকদের ভাষ্য ভিন্ন। তাঁদের মতে, এটি একাডেমিক সততার চেয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ। তারা বলছেন, এই পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের মাধ্যমে মুসলিম শাসকদের অবদান খাটো করা হচ্ছে এবং তাদেরকে শুধুমাত্র দখলদার ও বর্বর হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে, যা ইতিহাসের একপাক্ষিক ব্যাখ্যা।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, সহিংসতা ও দমন-পীড়ন প্রায় সব যুগের রাজতন্ত্রের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল। ইউরোপীয় ইতিহাসেও এমন বহু উদাহরণ রয়েছে—হেনরি অষ্টম থেকে এলিজাবেথ প্রথম, সবাই তাদের শাসনকালে রক্তপাতের আশ্রয় নিয়েছেন। মুঘলরাও ব্যতিক্রম ছিলেন না, কিন্তু একই সাথে তারা প্রশাসন, শিল্প, স্থাপত্য ও ধর্মীয় সহনশীলতার ক্ষেত্রেও অনন্য অবদান রেখেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আকবরের ‘সুলহ-ই-কুল’ নীতি কিংবা ‘দীন-ই-ইলাহি’ একটি বহুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রতিফলন।
বিভিন্ন মহলের মতে, এই পাঠ্যক্রম পরিবর্তন কেবল শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা ভারতের বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতেও প্রতিফলিত হচ্ছে। মুসলমান সম্প্রদায়কে দানব বা বিদেশি দখলদার হিসেবে তুলে ধরার এই প্রবণতা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিভাজনমূলক মনোভাব তৈরি করতে পারে।
অনেক শিক্ষাবিদ আশঙ্কা করছেন, ইতিহাসের এই ধরণের পুনর্লিখন প্রক্রিয়া শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে প্রভাবিত করছে এবং এর পরিণতিতে সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভক্তি আরও তীব্র হতে পারে।
ইতিহাস কেবল বিজয়ীদের গল্প নয়, বরং পরাজিত, নিপীড়িত ও বিরোধীদের কণ্ঠও ধারণ করে। একপাক্ষিক ব্যাখ্যা দিয়ে ইতিহাসের জটিলতাকে সরলীকরণ করা শিক্ষার্থীদের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্যও তা বিপজ্জনক।