Aap Jaisa koi Bengali Review : নেটফ্লিক্সে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত “আপ জাইসা কোই” সিনেমাটি রোমান্টিক-কমেডি ছাঁচে গড়ে উঠলেও এর ভিতরে রয়েছে একাধিক স্তর, একাধিক প্রশ্ন এবং একাধিক উত্তর—যা সহজভাবে ধরা যায় না, বুঝতে হয়। পরিচালক বিবেক সোনি (মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বর) নারীর আকাঙ্ক্ষা, পছন্দ এবং সমাজে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সাহসিকতার সঙ্গে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, হাস্যরসের মোড়কে।
৪২ বছর বয়সি সংস্কৃত শিক্ষক শ্রীরেণু ত্রিপাঠী—একজন লাজুক, ভার্জিন এবং সংস্কৃতিশীল মানুষ। আর মাধবনের অভিনয়ে শ্রীরেণু যেন একেবারে জীবন্ত। তার জীবনে হঠাৎ এক ঝলক আলোর মতো প্রবেশ করে ৩২ বছর বয়সি ফরাসি শিক্ষিকা মধু বোস (ফাতিমা সানা শেখ)। আত্মবিশ্বাসী, স্বাধীনচেতা, অভিজ্ঞ এবং সমাজের চোখে ‘তুলনামূলক এগিয়ে থাকা’ নারী। তারা একে অপরের থেকে অনেকটাই আলাদা—ঠিক যেন চা-তে আদা ও এলাচের মতন, কিন্তু মিশে গেলে অসাধারণ।
প্রশ্ন, উত্তর ও প্রতিবাদ
সিনেমার অন্যতম জোরালো মুহূর্ত হলো যখন শ্রীরেণু মধুকে প্রশ্ন করে:
“তুমি কুমারী, তাই না?”
এই একটিমাত্র প্রশ্নে গেঁথে আছে সমাজের দীর্ঘদিনের দৃষ্টিভঙ্গি, নারীদের বিচার করার পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। মধুর জবাবগুলো শুধু সংলাপ নয়, যেন প্রত্যুত্তর, প্রতিবাদ এবং পথনির্দেশ।
মধু একজন এমন নারী যিনি প্রেমে, যৌনতায়, কাজের ক্ষেত্রে কিংবা শহর বদলে জীবনের সমস্ত সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত, এমনকি যদি তার জন্য সমাজের চোখে ‘বিপজ্জনক নারী’ হয়ে উঠতে হয়।
অতীত থেকে বর্তমান
“আপ জাইসা কোই” নামটি ১৯৭৯ সালের নাজিয়া হাসানের কালজয়ী গান থেকে অনুপ্রাণিত। সেই গান যেমন নারীর স্বাধীন যৌনতাবোধকে উদযাপন করেছিল, ঠিক তেমনই এই ছবির গানগুলোও নারীর আত্মপ্রকাশকে এক নতুন ধ্বনি দেয়।
এই ছবি ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’-এর মতোই একটি সামাজিক বার্তা দিতে চায়—কিন্তু মাঝেমধ্যে গল্পের স্বাভাবিক প্রবাহ বার্তার ভারে চাপা পড়ে যায়। বার্তার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না, তবে প্রশ্ন থেকে যায়—”বার্তা দেওয়া মানেই কি বিনোদন ছাঁটাই?”
সবচেয়ে স্মরণীয় দৃশ্য
যখন শ্রীরেণু মধুকে বলে –
“বিয়ের পর আমি সব কিছু সীমার মধ্যে রাখব।”
মধুর ঠাণ্ডা অথচ দৃঢ় জবাব:
“আর তুমি আমার সীমা কেন নির্ধারণ করবে?”
এটা কেবল একটি ডায়ালগ নয়, এটি এক সামাজিক আন্দোলনের দাবিতে রূপ নেয়।
এই ছবি টি বোঝায়,
ভালোবাসা মানে শুধু একে অপরকে পাওয়া নয়, একজন আরেকজনকে সমানভাবে সম্মান করা, স্বাধীনতা স্বীকার করা, এবং নিজের ভিতরের ছাত্রসত্তাটিকে জীবনের নতুন পাঠ পড়ানো।
“গালতি করেঙ্গে, তো মাফি ভি মাঙ্গেঙ্গে। আপ বাস রেস্টে কা মৌকা দিজিয়েগা।”
এই একটি বাক্যে ফুটে উঠেছে সেই অনুরোধ যা বহু যুগ ধরে নারীরা পুরুষদের কাছে করে এসেছে—”আমাদের বোঝো, শিখো, এবং আমাদের সমান চোখে দেখো।”
তবে এখন সময় এসেছে নারীদের দায়ভার কমে পুরুষদের নিজেরাই শিখতে শেখার, এবং পিতৃতন্ত্রের চোখ বুজে থেকে নয়, চোখ খোলে দেখে নতুন করে জীবনকে জানতে শেখার।
আপ জাইসা কোই একটি প্রেমের গল্প—তবে তার চেয়েও বেশি, এটি একটি সমাজ-সমালোচনার আয়না।
আপনি যদি রোমান্টিক কমেডি দেখতে ভালোবাসেন, আবার সামাজিক বার্তা মাথায় রাখতে চান, তাহলে “আপ জাইসা কোই” হতে পারে আপনার উইকেন্ডের সিনেমা।