Unakoti tourist spot in Tripura
ঊনকোটি – উত্তর পূর্ব ভারতের একমাত্র এমন পর্যটন স্থল যেখানে এক কোটি থেকে একটি কম পাথরে খোদাই করা মূর্তি রয়েছে বলেও জানা যায়। ত্রিপুরার ৮ টি জেলার একটি ঊনকোটি জেলায় এই পর্যটন স্থল অবস্থিত। আর এই পর্যটন স্থলের নামানুসারেই এই জেলার নামকরণ হয়েছে বলে জানা যায়। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ১৭৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্র।
ঊনকোটি শব্দের আক্ষরিক অর্থ “কোটির থেকে একটি কম” , ত্রিপুরার জনজাতিদের মাতৃ ভাষায় একে বলে ‘সুব্রাই খুং’।
বলা হয় এটি একটি প্রাচীন শৈব স্থান। যেখানে পাথরে খোদাই করা বহু দেব দেবীর মূর্তি রয়েছে। কারো কারো মতে এখানে এক কোটি থেকে একটি কম মূর্তি রয়েছে। তবে সেই তথ্য কে নাকচ করেছেন এখানকার বহু স্থানীয় পুরোহিত।
২০২২ সালের ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য বাহী অস্থায়ী স্থানের তালিকায় রাখা হয় এই ঊনকোটি কে। গোটা পর্যটন স্থল টি পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। অনুমান করা হয় এই স্থানটি প্রায় ৫০০০ বছর পুরনো। এই ঊনকোটি কে ঘিরে বেশ কিছু রুচিকর গল্প সমূহ ও রয়েছে।
ঊনকোটির বিশেষত্ব
যে কোনো পর্যটন স্থলের কিছু নিজস্বতা রয়েছে যা সেই স্থান কে বিশেষ করে তোলে কিংবা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। সে মতোই এই ঊনকোটির ও কিছু নিজস্বতা রয়েছে। ঊনকোটি পাহাড়ে প্রায় ৩০০ এর ও বেশি সিঁড়ি রয়েছে যা পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে। আর তাঁর আশে পাশেই পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা বিভিন্ন দেব দেবীর মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। তাঁর মধ্যে একটি বিশাল কাজ গণেশের মূর্তি, মহাদেবের মূর্তি , ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি রয়েছে। এমন করেই প্রায় এক কোটি থেকে একটি কম মূর্তি এখানে রয়েছে বলে প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এই তথ্যের সপক্ষে তেমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।
এছাড়া ও পাহাড়ের গাঁ বেয়ে পরা স্বচ্ছ ঝর্ণার জল যেন এর সৌন্দর্যে আরও মাত্রা যোগ করে।
কেননা আজো পাহাড়ের বহু অংশ খোদাই করা হয়নি। এবং এই পাহাড়ে যে কটি মূর্তি পাওয়া গেছে তাঁর সংখ্যা ও অনেকটাই কম।
ইতিহাস ও প্রচলিত কাহিনী
এই পাহাড় কে কেন্দ্র করে বেশ কিছু কাহিনী প্রচলিত আছে। তাঁর মধ্যে সবচাইতে মনোমুগ্ধকর কাহিনী তৈরি হয়েছিল ভগবান শিব কে কেন্দ্র করে।
সেই কাহিনী তে বলা হয়, একদা দেবাদিদেব মহাদেব ত্রিপুরার উপর দিয়ে বারানসীর উদ্দেশ্যে রউনা হয়েছিলেন। তখন মহাদেব সহ ১ কোটি দেবতা ছিলেন সেই সফরে। ক্লান্ত দেবতারা নিশি রাতে এই পাহাড়েই ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ভোর বেলা সূর্যোদয়ের আগে সবার বারানসীর উদ্দেশ্যে রউনা হবার কথা ছিল। কিন্তু দেবাদিদেব মহাদেব ছাড়া আরও কারোর সূর্যোদয়ের আগে ঘুম ভাঙ্গেনি। বিরক্ত হয়ে মহাদেব বারানসীর উদ্দেশ্যে একাই রউনা হয়ে পড়েন এবং বাকি ৯৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯৯৯ জন দেবতা সেই স্থানেই কাল ঘুমে মগ্ন হয়ে পড়েন। আর তারা কখনোই উঠেননি এবং সেখানেই পাথর হয়ে যান। এই কিঙ্গবদন্তি রক্ষার্থেই সেই স্থানের নাম হয় ঊনকোটি।
তবে এই কাহিনী কে অনেকেই বিশ্বাস করেন না।
এই ঊনকোটির সুউচ্চ পাহাড়ে যেই পুরোহিত পূজার্চনা করেন তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবত এই পাহাড়েই আছেন। উনার মতে এই ঊনকোটি সত্য যুগ থেকেই এখানে অবস্থিত আর এই পাহাড়ে যে মূর্তি গুলো রয়েছে সেগুলিও সত্য যুগের। বিভিন্ন পাথর ও ইটের সিঁড়ি গুলিও এই যুগের নয় বলেই মনে হয়। তাছাড়া এই স্থানের নাম আগে ছিল কৈলাস ধাম। একে মহাদেবের স্থান বলেই গন্য করেন পুরোহিত রাও।
ত্রিপুরার যে কোনো জায়গা থেকেই রেল যোগে ঊনকোটি যাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। আগরতলা থেকে কুমার ঘাট পর্যন্ত রেল যোগে পৌঁছে সেখান থেকে সড়ক পথ ধরে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় ঊনকোটি।
তবে রক্ষনাবেক্ষন ও পরিচর্যার অভাবে জায়গাটি অনেকটাই নিজের মহিমা হারিয়েছে। যদিও বর্তমানে একে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ঠাণ্ডার পরশুমে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা ও বৃদ্ধি পায় প্রতিবছর।