Presiding officer attacked by BJP leader
নির্বাচন চলাকালীন একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন কর্মী তথা প্রিসাইডিং অফিসার কে জনসমক্ষে টেনে হিঁচড়ে এনে চড় থাপ্পর , ঘাড় ধাক্কা সমেত শারীরিক ভাবে নির্যাতন করার মতো ঘৃণ্য ঘটনা ত্রিপুরার ইতিহাসে বিরল। কিন্তু বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা তে এখন মনে হয় আর কোনো কিছুই বিরল নয়। কেননা সন্ত্রাস আর হুজ্জুতি তে এরা এমনি তেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের ডিগ্রি ধারী দল। এই অভিযোগ বিরোধী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ও।
তবে নির্বাচনের মতো একটি গণতান্ত্রিক উৎসবের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সমস্ত নির্দেশ কে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে পুলিশ প্রশাসনের পরোয়া না করেই বিভিন্ন বুথে যে প্রকার প্রহসনাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে কিছু শাসক দলীয় নেতা নেতৃত্ব সেটা তীব্র নিন্দার যোগ্যতা রাখে।
গতকাল অর্থাৎ ২৬শে এপ্রিল ছিল পূর্ব ত্রিপুরা আসনে লোকসভা নির্বাচন। সার্বিক দিক থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলেও কিছু কিছু জায়গায় ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা গেছে। তার মধ্যেই ৫৫ বাগবাসা বিধানসভা কেন্দ্রের ২২ নং পোলিং বুথ থেকে উঠে এসেছে এক হৃদয় বিদারক এবং তীব্র ধিক্কার পাওয়ার যোগ্য এমন এক ঘটনা। যেখানে বেশ কয়েক জন মিলে একজন প্রিসাইডিং অফিসার কে বেধড়ক মারধোর করছেন। কলারে ধরে, ঘাড় ধাক্কা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে বেড় করে এনে উনাকে রমারম চড় বসিয়ে দিচ্ছে জন কয়েক নেতা।
অভিযোগ বিজেপি উত্তর জেলা সভাপতি কাজল দাস এবং তার চামচা হিসেবে পরিচিত কেশব ঘোষ ঐ প্রিসাইডিং অফিসার কে মারধোর করেছেন। এই কাজল দাস বিজেপির একজন কার্যকর্তা। রাজ্যের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সাথে উনার ছবি ও রয়েছে। অস্বীকার করার জো নেই যে তিনি বিজেপি দলীয় লোক নন। ঘটনা টি গত কালকের হলেও , ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে আজ সকালের দিকে। আর সেই থেকেই চারিদিকে সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করে দেয়।
প্রথমত , ভোট গ্রহন চলাকালীন যে কোনো দলের নেতা নেত্রী কিংবা অন্য কেউ বুথের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেন না। কেবল মাত্র পোলিং এজেন্টরাই সেখানে উপস্থিত থাকবেন। তবে নির্বাচনের কাজে নিয়োজিত আধিকারিক দের সাথে কোনো রকমের বার্তালাপ কিংবা মতামত প্রদান করার সেখানে কোনো প্রয়োজনীয়তা কিংবা জায়গা নেই। এর বিরোধিতা করা মানেই মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট এর বিরোধিতা করা। কিন্তু দেখা গেল বাগবাসার ২২ নং বুথে বিজেপির উত্তর জেলা সভাপতি কাজল এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ রা মিলে বুথের ভেতরে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসার কে টেনে হিঁচড়ে এনে তার উপর বল খাটাল। আরও বড় বিষয় , একজন সরকারি আধিকারিকের উপর এভাবে জুলুম চালানো একটি আইনি অপরাধ। ঐ স্থানে নিরাপত্তা রক্ষীদের উপস্থিতিতেই গোটা ঘটনা ঘটেছে । সেই চিত্র ও ধরা করেছে ক্যামেরায়।
এর আগে জোলাইবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মন্ত্রী শুক্লা চরণ নোয়াতিয়ার বিরুদ্ধে ও প্রিসাইডিং অফিসার কে হুমকি ধমকি দেবার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে উল্টে প্রিসাইডিং অফিসার কেই বরখাস্ত করে দেওয়া হয়েছে। অথচ মন্ত্রী বলে, শুক্লা চরণ নোয়াতিয়া পাড় পেয়ে গেছেন। এবার উত্তর জেলার সভাপতি তথা শাসক দলীয় মাফিয়া কাজল এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কি কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করবে ? নাকি এই ঘটনা কে ও বিরোধী দের চক্রান্ত , বিজেপি কে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস , প্রিসাইডিং অফিসারের গাফিলতি ইত্যাদি ইত্যাদি বলে ধামাচাপা দিয়ে দেবে পদ্ম শিবির?
যেমনটাই হোক, তবে একজন ডিউটি রত প্রিসাইডিং অফিসারের গায়ে হাত তোলার বিষয় কে কোনো দল কোনো নেতৃত্বই ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে একটা কথা বলতেই হয়, বিজেপি দলের বড়াই করে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন সম্পন্নের আত্মবিশ্বাস কে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে খোদ দলের নেতা মহোদয়ই। যদি বাস্তব অর্থেই বিজেপি সৎ সাহস থাকে তবে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে দল কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে বলেই দাবী শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মহলের।