মুসলমান ফেরিওয়ালার উপর ক্ষোভ জাহির করে আবারো বিপাকে ত্রিপুরার মৎস্য দপ্তরের মন্ত্রী সুধাংশু দাস
রাজ্যের সকল হিন্দু ধর্মীয় দের একজন কট্টর রক্ষক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার অনন্য প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে একের পর এক বিপদে ত্রিপুরা রাজ্যের মন্ত্রীসভার এক মন্ত্রী মহোদয়। এর আগেও ধর্ম নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কিত পোস্ট করে তীব্র নিন্দার সম্মুখীন হয়েছিলেন। এবার ভিন ধর্মী এক ফেরিওয়ালার উপর ক্ষোভ জাহির করায় উনার এই অন্ধ হিন্দুত্ব বাদী মনোভাব কে ধিক্কার জানাচ্ছে শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ।
কথা হচ্ছে ত্রিপুরার ফটিকরায় বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা মন্ত্রীসভার গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর মৎস্য বিভাগের মন্ত্রী সুধাংশু দাস কে নিয়ে। বাংলাদেশে হিন্দু দের উপর আক্রমণের ঘটনা , এর পর রানির বাজারে ধর্মীয় বিষয় কে ঘিরে উত্তাপ ছড়ানোর পর পর ই একাধিক বার মন্ত্রী সুধাংশু দাস নিজ সামাজিক মাধ্যমে ধর্ম কে কেন্দ্র করে বেশ কিছু উস্কানি মূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। পরবর্তী সময় উপর মহলের চাপে পরে তা আবার ডিলিট ও করতে হয়েছিল। নিজের অতিমাত্রিক হিন্দু ভক্তি জাহির করতে গিয়ে তিনি নিজেই ভুলে গেছিলেন হিন্দু ধর্ম বাস্তবিক রূপে শান্তি ও সম্প্রীতির ধারক ও বাহক। কিন্তু উনি নিজের উস্কানি মূলক বার্তার মধ্যে দিয়েই গোটা হিন্দুত্ব বাদের ধারা কেই পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন।
এবার তার চাইতেও ভয়াবহ এবং চরম লজ্জাজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এক মুসলিম ধর্মী ফেরিওয়ালা কে অকারণে পথ আঁটকে মন্ত্রীর সাগরেদ দের দিয়ে বেধড়ক মারধোর করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে উনার বিরুদ্ধে।
আক্রান্ত যুবক পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা মতিউর রহমান। জীবন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বেশ কয়েক বছর যাবত এখানেই ফেরিওয়ালার কাজ করে রোজগার করেন। কৈলাশহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসন পত্র ফেরি করে বিক্রি করেন। এমন বহু ফেরিওালা আপনার আমার বাড়িতে প্রায়শই আসেন। এতে নতুন কিছু বিষয় নয়। মতিউর রহমান এর বক্তব্য অনুযায়ী এদিন তিনি রোজকার মতোই ফেরি করতে বেরিয়েছিলেন। ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গেছিলেন মন্ত্রী সুধাংশু দাসের পাড়ায়। আচমকা তাকে আটক করে মন্ত্রীর কিছু চেলারা তার নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করতে থাকে। তার আঁধার , প্যান কার্ড ইত্যাদি নথিপত্র দেখতে চায় তারা। মোবাইলে থাকা সমস্ত নথির ছবি দেখায় মতিউর। এর পর তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় মন্ত্রী সুধাংশু দাসের গাড়ির সামনে। গাড়ি তে বসে থাকা মন্ত্রী তার নাম মতিউর শোনা মাত্রই নাকি চেলাদের নির্দেশ দেন সাইডে নিয়ে গিয়ে তাকে ধোলাই দিতে। এর পরেই তার উপর অকথ্য অত্যাচার চালায় মন্ত্রী সুধাংশু দাসের চেলা রা।
ঘটনা বিস্তারিত জানিয়ে কৈলাশহর থানায় মামলা করতে গেলে মন্ত্রীর নাম শুনে গোলা শুকিয়ে যান থানা বাবুদের। গ্রাম বাসীদের দাবী , মতিউর দীর্ঘদিন যাবত এই এলাকায় ফেরি করছে। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তবে কি কারণে মন্ত্রী সুধাংশু দাস এই নিরীহ খেটে খাওয়া যুবক কে উদুম পেটালেন? শুধুমাত্র সে মুসলমান বলে ?
বিধায়ক ও মন্ত্রী হবার সময় উনি যে শপথ বাক্য পাঠ করেছিলেন তার প্রতিটা অক্ষর কি এবার ভুলতে বসেছেন তিনি ? ধর্ম রক্ষার রামে ভিন ধর্মী যে কারোর উপর এভাবে হামলা করা কোনো মন্ত্রীর কায হতে পারে কি ? এধরনের ঘটনার পরে আমাদের আরও একবার প্রশ্ন , উনি কি মন্ত্রীত্বের দায়িত্বে বহাল থাকার যোগ্য ? এতো কিছুর পরেও যদি মুখ্যমন্ত্রী চুপ থাকেন এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন না করেন তবে সুধাংশু দাসের মতো ব্যক্তিরাই আগামি দিনে ধর্মের নামে বিভাজন তৈরির কাণ্ডারি হয়ে দাঁড়াবে। আর এভাবেই ধর্ম নিয়ে দাঙ্গায় পুরে ছাই হবে শান্তি প্রিয় ত্রিপুরা।