Kamakhya temple
বৈচিত্র্যময় ভারতের প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি স্থানে রয়েছে নানা রহস্য। বহু অজানা তথ্য লুকিয়ে আছে প্রতিটি কোণায়। বিভিন্ন পর্যটন স্থল কিংবা তীর্থ স্থান গুলিতেও এমন বহু কাহানি আজো উন্মোচনের অপেক্ষায় দিন গুনছে।
তবে আজকের এই প্রতিবেদনে আপনারা জানবেন এমন একটি তীর্থ স্থানের বিষয়ে যেটি সাধারণ অর্থে দেবীর আরাধনা স্থল হলেও, এই আরাধনার আড়ালে রাতের ঘন আঁধারে চলে বহু সাধনা। যেগুলি কে আমরা তন্ত্র সাধনা ও বলে থাকি।
উত্তর পূর্ব ভারতের পার্বত্য রাজ্য তথা সেভেন সিস্টার এর মধ্যে একটি হচ্ছে আসাম। সেই আসাম রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটি তে রয়েছে ভারতের ৫১টি শক্তি পিঠের এক পিঠ যার নাম কামাখ্যা মন্দির। একে আবার কামরূপ কামাখ্যা ও বলা হয়। দেবী সতীর শব দেহ কে যখন কোলে করে নিয়ে উন্মাদ তাণ্ডব নৃত্য করছিলেন দেবাদিদেব ,তখন শ্রী বিষ্ণু উনার হাতের সুদর্শন চক্র দিয়ে দেবী সতীর মৃতদেহ টি কে খণ্ড বিখন্ড করে ৫১ টি টুকরো করে দিয়েছিলেন। যার প্রতিটি টুকরো ভারতবর্ষ এবং তার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পরে এবং সেই প্রতিটি জায়গায় একটি করে সতী পিঠ বা শক্তি পিঠ গড়ে উঠে। বলা হয় এই কামরূপ কামাখ্যায় দেবী সতীর গর্ভ ও যোনির অংশ পড়েছিল। আর তাই এখানে যে শক্তি পিঠ গড়ে উঠেছে তাঁকে নাম দেওয়া হয়েছে কামরূপ কামাখ্যা।
গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাংশে নীলাচল পাহাড়ের বুকে গড়ে উঠেছে এই মন্দির। হিন্দু ধর্মীয়দের জন্যে এক মহৎ এবং পবিত্র স্থান হলেও কালের পরিবর্তনে সব ধর্মের মানুষই এই মন্দিরে এক বার হলেও গিয়েছেন। বলা হয় কামরূপ কামাখ্যায় মায়ের কাছে মন থেকে কিছু চাইলে মা অবশ্যই মনস্কামনা পূরণ করেন। এই মন্দির এর পাশে দশমহাবিদ্যার মন্দির ও রয়েছে। আর এই দশ মহাবিদ্যা মন্দিরে প্রায় ৩০ জন দেবীর মূর্তি রয়েছে যাদের নিত্য পূজা করা হয়।
মায়ের মূল মন্দিরে প্রবেশের পূর্বে কিছু বিধি আছে যা প্রত্যেক ভক্তদের মানতে হয়। প্রথমেই মন্দিরে প্রবেশ করে মন্দির এর ভেতরে অবস্থিত দীঘি তে হাত পা ধুইয়ে শুদ্ধ হয়ে তার পরেই মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। এই দীঘির নাম দেওয়া হয়েছে সৌভাগ্য কুণ্ড। এর পাশে প্রদীপ জালানোর জন্যে রয়েছে আলাদা করে সুব্যবস্থা।
এর পর মন্দিরে প্রবেশ করে মায়ের পূজার্চনা করা হয়। তবে মূল মন্দিরের ভেতরে কামাখ্যা মায়ের যে গর্ভ গৃহ রয়েছে তাতে প্রবেশ করতে গেলে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়। এছাড়া যারা মন্দিরের পাণ্ডা কিংবা পুরোহিত কে দিয়ে পুজো করিয়ে নেন তাদের পক্ষে গর্ভ গৃহে প্রবেশ সম্ভব নয়।
এবার আসা যায় মন্দিরের বাহ্যিক পূজার্চনা ব্যতিরেকে বিভিন্ন অমাবস্যা তিথিতে যে তন্ত্র সাধনা হয় সে বিষয়ে। সাধারণত কামাখ্যা মায়ের মন্দিরে রোজ হাজার হাজার ভক্তরা নানা মানত করতে আসেন। কিংবা কোনো কঠিন রোগ ব্যধি থাকলে ও মায়ের কাছে পুজো দিয়ে প্রার্থনা করেন ভক্তেরা। কিন্তু ভক্তি ছাড়াও একটা অংশ রয়েছে যারা এখানে আসেন রাতের আঁধারে বিভিন্ন তন্ত্র সাধনা ও কালো জাদু বিদ্যা করতে। মন্দির চত্বরে কালো বস্ত্র পরিধেয় বহু অঘোরী দের চোখে পরে। তাদের পড়নে কালো পোশাক, গায়ে ও মুখে ছাই ভস্ম, কপালে কালো কিংবা লাল তিলক এবং হাত ও গলায় রুদ্রাক্ষের ভারী মালা থাকে। এদের দেখলেই বোঝা যায় এরা তন্ত্র বিদ্যায় পটু। এধরণের বেশ ভুষা ধারীদের দেখলেই বুঝবেন যে এরা মন্দির চত্বরে তন্ত্র বিদ্যা সাধনা করেন। এমনকি কামাখ্যা মন্দির থেকে কিছুটা দূরত্বে কাল ভৈরব মন্দিরের পাশেই বৃহৎ শ্মশান রয়েছে। যেখানে বহু জায়গা থেকে বড় বড় সাধু সন্ত, অঘোরীরা এসব কালো বিদ্যা, জাদু টোনা করতে আসেন এখানে।
তবে সর্বোপরি, এই মন্দির এবং এই শক্তি পিঠের উপর ভক্তদের গভীর আস্থা রয়েছে। যারাই আজ অব্দি মায়ের কাছে মনোবাঞ্ছা জানিয়ে ভক্তিভরে পুজো দিয়েছেন তাদের কাউকেই ফেরান নি মা। তাই বছরের প্রতিটা সময়েই এখানে ভক্তদের সমাগম পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে দীপাবলি তিথিতে মায়ের মন্দিরে বিশাল আয়োজন দেখা যায়।